বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেখানেই থাকুন সম্পত্তি আপনারই থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

যেখানেই থাকুন সম্পত্তি আপনারই থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সব মানুষের জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার (দেশবাসী) সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আমরা আপনার অধিকার সুরক্ষিত ও সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের প্রথম তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলনের উদ্বোধন করে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরজাহান আক্তার সাথী। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলনের উদ্দেশ্য একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা এবং ভূমি সেবার ডিজিটালাইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করা। বাকি ছয়টি উদ্যোগ হলো- রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন ইন্টারকানেকশন, স্মার্ট ল্যান্ড ম্যাপ, স্মার্ট ল্যান্ড রেকর্ডস, স্মার্ট ল্যান্ড পিডিয়া, স্মার্ট ল্যান্ড সার্ভিস সেন্টার এবং ইউনিয়ন ল্যান্ড অফিস। ‘ফিল্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’, ‘সায়রাত ও খাস জমি ব্যবস্থাপনা’, ‘অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি মামলা এবং সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে’-এর মতো ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে চারটি সেমিনার ও প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের কার্যক্রম রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমির মালিকানা সংক্রান্ত সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার অবসান এবং ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভূমির মালিকানা সুনির্দিষ্ট করার জন্য ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে এবং এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হবে। সমাজে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে ভাইবোন উভয়েই একে অপরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, যার ফলে হামলা, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি একটি সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।’

জমিসংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার সময় জনগণকে কিছুতেই ঝামেলার সম্মুখীন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি ডিজিটাল ল্যান্ড সিস্টেম তৈরি করছি বলে সমস্যাটি আর থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-১৪ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সহিংসতার কথা দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, এসব অফিসে হামলার ফলে সারা দেশে ভূমি অফিসগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। তাঁর সরকার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত উন্নত উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি ৪০০টি উপজেলায় আধুনিক ভূমি অফিস উদ্বোধন করেছি। বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের সম্পদ ধ্বংস করে আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে তৈরি করে। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সেবা করা, আমাদের লক্ষ্য দেশবাসীর শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।’

একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অনলাইন ভূমি নামজারি এবং কিউআর কোডসহ ডিসিআর ও ভূমি কর প্রদান ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। তিনি বলেন, দেশবাসী ১৬১২২ নম্বরে কল করে এবং ষধহফ.মড়া.নফ সার্চ করে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে নামজারি, খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ ভূমিসংক্রান্ত সেবা পেতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি অফিসগুলো এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি ফোনকল পেয়েছে- যার মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে। তিনি আরও বলেন, যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে তার জমির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যবস্থা চালু করার ফলে জনগণ দ্রুততম সময়ে জমিসংক্রান্ত সেবা পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন খুব শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ভূমিসংক্রান্ত সেবা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে এবং এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ‘ডেভেলপিং ট্রান্সপারেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবল পাবলিক ইনস্টিটিউশনস’ ক্যাটাগরিতে মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) অ্যাওয়ার্ড ২০২২ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ’স ডিজিটাল ল্যান্ড (ডেভেলপমেন্ট) ট্যাক্স সিস্টেমকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ করছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমি করমুক্ত এবং দেশের স্বাধীনতার পর পরই কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব সার্টিফিকেট মামলা বাতিল করে ঘোষণা করেছিলেন, যে কেউ সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের বরাদ্দ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান যাতে করে বাংলাদেশকে খাদ্যশস্যের জন্য কারও ওপর নির্ভর করতে না হয়। তিনি আরও বলেন, কভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশসহ গোটা বিশ্ব অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা আর আমদানির ওপর নির্ভর করে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য অন্য দেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর