মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল্লাহর ভয় হাসিল করা রোজাদারের বড় অর্জন

আল্লাহর ভয় হাসিল করা রোজাদারের বড় অর্জন

পবিত্র-সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুত্তাকি হতে পারে। যিনি তাকওয়া তথা জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে শরিয়ত মেনে চলেন। এক কথায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরে এবং যার থেকে বিরত রয়েছেন তা থেকে বিরত থাকেন। তাকেই প্রকৃত অর্থে মুত্তাকি বলে। নববী আদর্শে হজরত সাহাবায়ে কিরাম, বুজুর্গানে দীনদের সুমহান জামাত তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আল্লাহর সৃষ্টি অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাত পরহেজগার-মুত্তাকিদের জন্য অপেক্ষা করছে। হাশরের ময়দানের একটি দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা আয়াত নাজিল করেন। ‘তোমাদের প্রত্যেক তওবাকারী ও সংরক্ষণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা ক্বাফ : ৩১-৩২)

মুত্তাকিদের জন্য জান্নাতকে অদূরে এনে উপস্থিত করা হবে। হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত দেখা যাবে। ইশারা করে বলা হবে। (এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সঙ্গে দুনিয়ায়।) এই জান্নাত পাবে হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম, সিদ্দিকিন, শুহাদা ও সালেহিনরা। এক কথায় মুত্তাকিনরা। যিনি মুত্তাকি হন মূলত তিনি (হাফিজ) হয়ে থাকেন। অর্থাৎ যিনি নিজের সত্তাকে কলুষমুক্ত রাখেন। নিজেকে শুদ্ধ ও সাফ-সুতরা রাখেন। কারণ আল্লাহ তো আমাদেরকে সাফ-সুতরা করে সৃষ্টি করেছেন। জন্মের সময় গুনাহের ময়লা আমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি আমাকে গুনাহ, পাপ, অপরাধসহ সব ধরনের ময়লা থেকে সাফ-শুদ্ধ রাখব। হাফিজ-এর আরেক মর্ম হলো- সংরক্ষিত। নিজেকে সংরক্ষণ করব সব অপরাধ থেকে। সংরক্ষণ করব আমি আল্লাহর সব বিধানগুলোকে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া হারাম-হালালের গন্ডিকে। সংরক্ষণ করব আল্লাহর আহকামগুলোকে। আল্লাহ চাহে তো আমি ভালো থাকব। নিরাপদ থাকব। মুত্তাকিদের আরেক প্রশংসিত গুণ হলো, মুত্তাকিনরা মানুষ। গুনাহ হয়ে যেতে পারে। ভুল হয়ে যেতে পারে। হয়ে গেলে গুনাহর ওপর দম ধরে থাকে না। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দিকে ঘুরে আসে। তওবার মাধ্যমে ফিরে আসে। কারণ গুনাহ করার মানেই হলো আল্লাহর কাছ থেকে নিজের চেহারা ফিরে গেল। একজন মুত্তাকি তো বাস্তবে ইমান, কালিমা ও তাওহিদের মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহমুখী থাকেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি আমার চেহারা ওই সত্তার দিকে ঘুরিয়েছি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও জমিন।’ (সুরা আনআম : ৭৯) প্রকৃত অর্থে একজন মুত্তাকি সব সময় মনে করেন আমি আল্লাহমুখী। আমার দিল, আমার চেহারা আল্লাহর দিকে। পক্ষান্তরে অপরাধ ও গুনাহ হওয়া মানেই হলো- আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম। আমার কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। নাউজুবিল্লাহ! তাই তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়। তওবাকে তওবা এ জন্যই বলা হয় যে, তওবার দ্বারা বান্দা আবার সঠিক পথে ফিরে আসে। আমি তো অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। নাহ, আমার রাস্তা তো এটা নয়। আমার রাস্তা একমাত্র আল্লাহর দিকে। আমি ফিরে এসেছি। বারবার তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। তওবার মানেই হলো ফিরে আসা। মুত্তাকিদের অন্য আরেকটি প্রশংসিত গুণ হলো মুত্তাকি ব্যক্তি সব সময় ইস্তিগফারের ওপর থাকার চেষ্টা করে। সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করেন। সব সময় তার অন্তরে থাকে আল্লাহর ভয়। আর বাস্তবেই ভয় তো আল্লাহ রব্বুল আলামিনকেই করা উচিত। আমি মানুষ। যিনি আমার সঙ্গে দয়ার মুআমালা করেন, তাকেই তো আমার ভয় করা উচিত। এখানে ভয় মানে কী? ভয় মানে মহব্বত মিশ্রিত ভয়। যা একজন প্রকৃত মুমিনের মাঝে বিদ্যমান থাকে। মোটামুটি কথা হলো মুত্তাকি হতে হলে ১. দিলে-মনে আল্লাহর খাশিয়াত (ভয়) থাকা ২. আর তার প্রভাবে হাফিজ হওয়া। ৩. আল্লাহর বিধানকে খেয়াল করে চলা। ৪. বেদআত থেকে বেঁচে সুন্নাত মোতাবেক চলা। ৫. গুনাহ হলে তওবা করা। ৬. আল্লাহর দরবারে আল্লাহমুখী দিল নিয়ে হাজির হওয়া। এই ছয়টা বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে মুত্তাকি বলা হবে। রব্বে কারিম আমাদের প্রকৃত মুত্তাকি হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর