সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কী চায় যুক্তরাষ্ট্র

সংকট নেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্কে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

কী চায় যুক্তরাষ্ট্র

রাজনৈতিক দু-একটি ইস্যুতে কথা-পাল্টা কথা থাকলেও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো ধরনের সংকট দেখছেন না ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনীতিকরা। তাঁরা বলছেন, সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক। কয়েক ধরনের প্ল্যাটফরমে ইস্যুভিত্তিক এসব আলোচনা চলছে নিয়মিতই। এর অংশ হিসেবে কর্মকর্তা পর্যায়ে সফর বিনিময় বেড়েছে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে। এর অংশ হিসেবে শ্রমমান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের একটি দল এখনো ঢাকা সফর করছেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার কোনো ইস্যু দেখছেন না কেউ। যুক্তরাষ্ট্রের আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে কি না জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বিস্তৃত ও গভীর’ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে চায়। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তৃত ও গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা না হলেও মন্তব্য করেছেন সরকারের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার ধারণা তারা স্যাংশনস (নিষেধাজ্ঞা) দেবে না। তারা বাস্তবতাটা বুঝবে। তারা একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আমাদের সহযোগিতা করবে। পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নির্বাচন হতে হবে, সেটা কোনো দিনই হবে না। সংবিধানবহির্ভূত কিছু হবে না। তবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হওয়া দরকার। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রতিদিন বিএনপি যেসব অভিযোগ আনছে, এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে কিছু বিদেশি শক্তি। জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তববাদী হতে হচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে দেশ ও জাতির স্বার্থে, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গি দমনে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেটার জন্য যদি নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটা কতটা যুক্তিসংগত? তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা যদি দেয় একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের এর মধ্য দিয়েই চলতে হবে। আরও যদি নিষেধাজ্ঞা দেয় সেটা বলছি। চায়নার বিরুদ্ধে কত কিছু বলছে। চায়নার জিনিসে তো আমেরিকার বাজার সয়লাব হয়ে আছে। ওভাবে বন্ধ হয় না। যদি একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয় যে বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য নেবে না বা অমুক পণ্য নেবে না। আমার মনে হয় না আমেরিকা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে দেবে। একই বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল সচিবালয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। ৫১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করে আসছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে তারা প্রশিক্ষণসহ নানা সহায়তা দিয়ে আসছে। আমাদের যারা উন্নয়ন সহযোগী আছে, তাদের সহযোগিতাতেই আমাদের দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রচ- প্রোফাউন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকেই স্যাংশন দিয়ে রেখেছে কয়েক দশক ধরে। কই ইরানের সরকার তো পড়ে যায়নি! ইরানের সরকার বহাল তরিয়তে আছে। তারপর কিউবার বিরুদ্ধে স্যাংশন ছিল বহু বছর। কিউবাকে টলাতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক মাইল দূরে কিউবার সরকার পরিবর্তন হয়নি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বহু স্যাংশন। কই সেখানে তো সরকার পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক স্যাংশন। সেই স্যাংশন অমান্য করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে আমদানি করছে। ভারত তো করছে, অনেকেই করছে। তো এগুলো দিয়ে খুব একটা লাভ হয় না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, র‌্যাব ও কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের চেয়ে নিবিড়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সংখ্যক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দৃঢ় উপস্থিতি অর্জন করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি অত্যন্ত নগন্য। রোহিঙ্গা সমস্যা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্র যে অনুদান দিয়েছে তা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। কভিড টিকায় যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে তা ছিল প্রশংসনীয়। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক সহায়তা, শরণার্থী সংকট, সমুদ্র নিরাপত্তা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা এবং সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর এখন পর্যন্ত  সেই নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়নি। তবে চলতি বছর ঢাকা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, অগ্রগতি না থাকলে র‌্যাবের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসত। আমি বাংলাদেশ সরকারকে বলেছি, র‌্যাব ও সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার এক বছরের মাথায় সংস্থাটির আরও সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। কারণ আমরা দেখেছি, সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার ও র‌্যাব নিজেও অগ্রগতি করেছে। এটা উৎসাহব্যঞ্জক।

 

তারা কী চায় পরিষ্কার নয়

 

ইতিবাচক সম্পর্ক রাখতে উদ্যোগী হতে হবে

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর