দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছোট আকারের বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে বলে আওয়ামী লীগকে তারা জানিয়েছে। চার সদস্যবিশিষ্ট অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল আগামী নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসবে এবং নির্বাচন শেষ করে দেশ ত্যাগ করবে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জলবায়ু, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নারীর ক্ষমতায়নে কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করবে সেটাও জানতে চেয়েছে ইইউ। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমনটি জানানো হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে ইইউ ইইউভুক্ত ১০টি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ইইউ ঘোষণা করেছে যে তারা একটা ছোট আকারের এক্সপার্ট গ্রুপ নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠাবে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান ইইউ জানতে চেয়েছে বলেও জানান মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, কী চিন্তায় অগ্রসর হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছে ইইউ সদস্যরা। আমরা বলেছি, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কিছুদিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন তাদের তফসিল ঘোষণা করবে। আমরা আমাদের শিডিউল মোতাবেক নির্বাচন করব।
আওয়ামী লীগের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, নির্মল চ্যাটার্জি, আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য সোহরাব হোসেন, তারিক হাসান সমী, খালেদ মাসুদ আহমেদ প্রমুখ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আজকের (গতকাল) আলোচনায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাঁর দল কী কী করবে, সেটাও ইইউ জানতে চেয়েছে।
বিএনপি বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশা করি। সংলাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম এই সদস্য। ফারুক খান বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করলে দেশ কীভাবে চালাব, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা। সে বিষয়ে তাদের আমরা অবগত করেছি। আমাদের নির্বাচন ইশতেহারে সে প্রশ্নের উত্তর তারা পেয়ে যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের ইশতেহার কী রকম হবে, তাঁরা জানতে চেয়েছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে নির্বাচনী ইশতেহারে দুটি দিক থাকবে। প্রথম অংশে, গত নির্বাচনের ইশতেহারে যে অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো কতটা পূরণ হয়েছে, জানানো হবে। আগামী পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ কী করতে চায়, সেটা ইশতেহার থাকবে। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, খুব ভালো মিটিং হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর যে ৫০ বছরের ডিপ্লোম্যাটি সম্পর্ক, তা খুবই চমৎকার। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলসে যাচ্ছেন। সেখানে আমাদের মধ্যে পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট হবে। এ কথাগুলো তাঁরা বৈঠকের প্রথমেই বলেছেন। বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে কী কী করব, নারীর ক্ষমতায়, তরুণ নেতৃত্ব, নারী নেতৃত্ব বাড়ানো, জ্বালানি খাতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ, ই-গভার্নেন্স নিয়ে জানতে চেয়েছে। এ ছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।’ তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন সংস্কারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮২টি উদ্যোগ লিখিত আকারে ইইউ প্রতিনিধি দলকে আমরা দিয়েছি।