নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ও এর উপদেষ্টারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। ফলে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ চলছে জনপ্রশাসনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রুতই প্রশাসনে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে এ ঝড়ের মধ্যে অনেক সিনিয়র-জুনিয়র কর্মকর্তা ভোল পাল্টিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। রাতারাতি অনেকেই সুর পাল্টে মিশে গেছেন বর্তমান স্রোতের সঙ্গে। তবে চিহ্নিত আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তা এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলা কর্মকর্তারা আছেন বেকায়দায়। তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন। তবে তাদের কর্মকালীন আর্থিক বিষয়ে তদন্তের কথা উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব। এসব মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবদের সঙ্গে আজ বৈঠক করবেন তিনি। সকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক থেকে তিনি সচিবদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন থেকেই বঞ্চিত কর্মকর্তারা জোট বেঁধে সচিবালয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিতদের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন মো. আবদুর রউফ। তিনি একই মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। এত দিন এপিডি অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করা মো. নাজমুছ সাদাত সেলিমকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এর আগে ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর আগে থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে আইজিপি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত সচিব, এমনকি ক্ষমতা দেখানো উপসচিব পর্যায়েও পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের অনেক সচিবকেও পরিবর্তন করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা লাভবান হয়েছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদের সরানোর জন্য আন্দোলন হচ্ছে জোরালোভাবে। গতকালও শেখ হাসিনা সরকারের সময় দায়িত্ব পালন করা সব সচিবের অপসারণ দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা সচিবদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কতিপয় কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সবকিছু যদি নিয়মের মধ্যে হতো, কোনো ব্যক্তি বা দল দেখা না হতো তাহলে আমাদের কারও এসবের জন্য জমায়েত হতে হতো না। এখন মুহূর্তের মধ্যেই সবাই জনপ্রশাসনে ভিড় করছেন। কারণ আগের সরকারের সময় সুবিধাভোগী কর্মকর্তারাই আমাদের বঞ্চিত করেছেন। অথচ আমাদের সবারই যোগ্যতা-দক্ষতা আছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি ঢালাওভাবে সরিয়ে দেওয়া বা চেয়ারে এসে বসে যাওয়ার বিষয় নয়। আইনি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বল বা চাপ প্রয়োগ করে কিছু করা যাবে না। এরপরও এমনটি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়বে। তিনি বলেন, যাদের আচরণে, কাজকর্মে দলবাজ প্রকাশ হয়েছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখা যাবে না। তবে তাদের সরানো বা কাউকে দায়িত্ব দেওয়ারও একটা পদ্ধতি আছে। এর বাইরে কিছু করা ঠিক হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, আমার মতে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। যিনি চুক্তি নিয়োগে আছেন নৈতিকভাবে তাদের নিজেদেরই পদত্যাগ করা উচিত। সূত্র জানায়, যেহেতু ইতোমধ্যে এপিডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়-বিভাগে রদবদল আসবে। বেশির ভাগ মন্ত্রী-সচিবের পিএসকে দায়িত্ব থেকে সরানো হবে। ইতোমধ্যে সরকারের ৪২ জন পিআরওকে সরিয়ে নিজ বিভাগে নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কেউ কেউ উপদেষ্টাদের পিএস হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, পিএস/এপিএস হয় মন্ত্রীদের ইচ্ছায়। মাঠ প্রশাসনে নতুন ডিসি দেওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতই মাঠ প্রশাসনেও সংস্কারের উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তারা ডিসি-এসপি হয়েছেন। সে কারণে দ্রুতই পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন অনেকে। প্রশাসনের বাইরেও রদবদলের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি- প্রো-ভিসি, প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন।