বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে যিনিই নির্বাচিত হোন তা হবে ঐতিহাসিক। সে দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হলে তিনিই হবেন প্রথম কোনো নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট।
বিশ্ব মোড়লের দেশে এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসই দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো। ফলে ট্রাম্প ও কমলা দুজনেরই জয়ের সম্ভাবনা সামনে নিয়ে হিসাবনিকাশে ব্যস্ত পুরো বিশ্ব। বৈশ্বিক রাজনীতি ও কূটনীতির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল।
নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রধান দুই দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়ছেন। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকালে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ আজ ভোরে শেষ হবে। লড়াইয়ে থাকা ৬০ বছর বয়সি কমলা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ৭৮ বছর বয়সি ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে কমলা নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট। অভিবাসী পরিবার থেকে উঠে আসা কমলার সামনে তাই রয়েছে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। অবশ্য ভাগ্যও রয়েছে কমলা হ্যারিসের পক্ষে। কারণ তিনি এবার বেশ নাটকীয়ভাবেই হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে বেশ দীর্ঘ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ধাপ পাড়ি দিয়ে এবং বেশ কয়েকটি নির্বাচনের মধ?্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হয়। সেখানে ভাগ?্য কতটা সহায় হলে কোনো প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া যায় তার প্রমাণ কমলা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাট দলের পূর্বঘোষিত প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বয়স ও শারীরিক যোগ্যতা বিবেচনায় নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে তাঁরই রানিং মেট কমলার নাম প্রস্তাব করেন। তখনই হোয়াইট হাউসকে একদম কাছ থেকে চেনা কমলা হ্যারিসের হোয়াইট হাউসের মূল চেয়ারে বসার সুযোগ তৈরি হয়। নির্বাচনি প্রচারের শেষ ভাষণে আত্মবিশ্বাসী কমলা বলেছেন, ‘আমি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে প্রস্তুত।’
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে ইতিহাসে প্রথম ‘অপরাধী’ প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত। পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মামলায় ইতোমধ্যে দোষী প্রমাণিত ট্রাম্পের আইনজীবীরা বারবার আদালতের কাছে সাজা ঘোষণার দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করে গেছেন। সে আবেদন মেনে তারিখ বদলানোও হয়েছে কয়েকবার। শেষ নির্দেশ অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা হতে পারে ২৬ নভেম্বর। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২০ দিন পর। সাজা ঘোষণার আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। তাই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। আইনজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ফৌজদারি মামলা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তবে হারলে আবার আইনি লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে ট্রাম্পকে। অন্যদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে ফলাফল নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের শুরুতেই এ মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। ফের প্রেসিডেন্ট হলে প্রথমেই অ্যাটর্নি জেনারেল স্মিথকে বরখাস্ত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফৌজদারি মামলা ছাড়াও একাধিক দেওয়ানি মামলায়ও নাম জড়িয়েছে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি তৌহিদ আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশই হয় ডেমোক্র্যাটিক নয়তো রিপাবলিকান পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ হওয়ার আগেই বলে দেওয়া যায় কোন রাজ্যে কোন দলের প্রার্থী জিতবেন। তবে সাতটি অঙ্গরাজ্য নিয়েই রয়েছে যত ভাবনা। এগুলোকে বলা হয় সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য। এ সাতটি অঙ্গরাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাদা। এ অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলাফলই নির্ধারণ করে দেয় কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সুইং স্টেটগুলোয় হামলা ও সহিংসতার উদ্বেগও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব অঙ্গরাজ্যে বিশেষ নিরাপত্তামূলক সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড। মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোয় ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবে আসলে পাঁচটি ইস্যু। এগুলো হলো অর্থনীতি, অভিবাসন, গর্ভপাত, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও জলবায়ু।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। নির্বাচিত হন ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে। ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। সব রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তার বেশি পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
আলজাজিরার খবরে বলা জয়, এবারে সাত সুইং স্টেটের মধ্যে দুই রাজ্য পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান হতে পারে মূল ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’। এ দুই অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে এবারের নির্বাচন। পেনসিলভানিয়ায় ১৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে এ অঙ্গরাজ্যে জয়লাভ করেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৮৮ সালের পর সেবারই প্রথম পেনসিলভানিয়ায় কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয় পান। অন্যদিকে মিশিগানে আছে ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এ অঙ্গরাজ্যেও ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ছিল ১৯৯২ সালের পর প্রথম মিশিগানে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর জয়।
► ফল আসবে কখন রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা