নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত বিগত ইসি ক্ষমতার ব্যবহার করেনি। তাই নির্বাচনি অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ও সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক অপরাধ হয়েছে। এই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। সেটাও আমরা আলোচনা করেছি। যারা অপরাধ করেছেন, যাদের অপরাধ প্রমাণ হবে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে। বিগত তিন কমিশন নাকি সব কমিশনকে বিচারের আওতায় আনবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারাই অপরাধ করেছে সবাইকে আসতে হবে। এগুলো তো সুস্পষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা আছে। এগুলো যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয়, এগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে আগের কমিশন যুক্তি দিত যে, ফলাফল হওয়ার পরে কমিশনের আর অপরাধের শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না- এমন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা ইচ্ছা করলেই করতে পারতেন। গেজেট হাওয়ার আগে তদন্তসাপেক্ষে (আদালতের সুস্পষ্ট রায় আছে) তারা নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। শুধু নির্বাচন বাতিল নয়, তদন্তসাপেক্ষে পুনর্নির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেননি।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, আমরা ইসিতে এসেছিলাম নবগঠিত নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করব যাতে সুচারু ও সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে পারে এবং সফল হয়। কিছু সংস্কার প্রস্তাব দেব যেগুলো তারা কিছু বাস্তবায়ন করবে আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে।
নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারত না- এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে দিনকে রাত, রাতকে দিন করা ছাড়া সবই করতে পারে। আমাদের আইনে বলা আছে এবং আদালতের রায়ে সুস্পষ্ট বলা আছে, আলতাফ হোসেন বনাম আবুল কাশেম মামলায় আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে আইনকানুন বিধিবিধানের সঙ্গে সংযোজন করতে পারে। যেখানে অস্পষ্টতা আছে, যেখানে গ্যাপ আছে সেগুলো তারা পূরণ করতে পারে।
নতুন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের কোনো মতামত দিয়েছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি। আমাদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে অনেক কিছু উঠে এসেছে। মনে হলো আমাদের কোনো মতপার্থক্য নেই। ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা সহায়তা করতে এক পায়ে রাজি আছি। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই।