শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। প্রেস উইং জানায়, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে সেগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত বোধ করবেন ও অভয় পাবেন বলে জানান তারা। বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এমনকি ছয় বছরের শিশুকেও গুমের বর্ণনা কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান তারা। প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের তদন্তে যে ঘটনাগুলো উঠে এসেছে তা গা শিউরে ওঠার মতো। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।’
চার দিনের সফরে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ দিবাগত রাত ১টায় তিনি ঢাকা ছাড়বেন। প্রধান উপদেষ্টা এবার জার্মানি, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম ও থাইল্যান্ডের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। আগামী ২০-২৪ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি, নাইম আলী। উপপ্রেস সচিব বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবার বাংলাদেশ বিষয়ক একটি ডায়ালগের আয়োজন করেছে সম্মেলনে। ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীপ্রধান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেওয়া হবে ওই অনুষ্ঠানে।
গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফুটবলকে ঘিরে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে থাকা আবেগপূর্ণ সম্পর্ককে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলা বাণিজ্য বৃদ্ধি ও এ খাতে সম্পূর্ণ মালিকানাধীন বা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে দেখতে এবং জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত সেসা আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আয়ারেসে বাংলাদেশের দূতাবাস চালুর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দূতাবাস চালু হলে দুই দেশের সুসম্পর্ককে উভয় দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, যা তার দেশের পক্ষে ঝুঁকে আছে। আর্জেন্টিনা সরকার বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সমতা আনার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রদূত তুলা, যৌথ বিনিয়োগ, ওষুধশিল্প, টেক্সটাইল, নারী ফুটবলসহ ফুটবল খেলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্রঋণ, বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণ, এলএনজি ও ধানের রোগপ্রতিরোধসহ বিভিন্ন খাতে নিবিড়ভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
একই দিনে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায়ি সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন গত জুলাই-আগস্ট মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো স্মরণ করেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনুস রাষ্ট্রদূত সিম্পসনকে এই বছরের আগস্টে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।