বিদেশে সাহায্য প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ইলন মাস্ক। ট্রাম্প ফেডারেল সরকারের আকার কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার নেতৃত্বে রয়েছেন এই ধনকুবের। তিনি বলেছেন, আমরা বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিতে কাজ করছি।
গতকাল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এক্সে এক আলাপচারিতায় তিনি এ কথা জানান। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী মাস্ক এক্সেরও মালিক। ট্রাম্প তাকে ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানো বিষয়ক প্যানেলের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই আলপচারিতায় মাস্কের সঙ্গে রিপাবলিকান সিনেটর জনি আর্নস্ট ও মাইক লি এবং গেল নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিবেক রামাস্বামীও ছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আলাপচারিতার শুরুতেই মাস্ক জানিয়ে দেন যে তারা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দিতে কাজ করছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই পদক্ষেপের সঙ্গেও একমত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা (ইউএসএআইডি) মেরামত করার মতো অবস্থায়ও নেই।’ সপ্তাহান্তে মাস্কের অধীনে থাকা ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রতিনিধিদের ইউএসএআইডি ভবনের সংরক্ষিত অংশে প্রবেশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় আন্তর্জাতিক উন্নয়নে সহায়তাকারী সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে ট্রাম্প প্রশাসন পদচ্যুত করে বলে রবিবারই তিন সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছিল। ইউএসএআইডি এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতা সংস্থা। ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র এই সংস্থার মাধ্যমে সংঘাতমুখর অঞ্চলগুলোতে নারী স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ পানি, এইচআইভি/এইডসের চিকিৎসা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও দুর্নীতিবিরোধী কাজে বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছিল। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের হিসাবে থাকা সব মানবিক সাহায্যের ৪২ শতাংশই দিয়েছিল এই সংস্থা। শনিবার ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট অফলাইনে ছিল, রবিবারও অনেক ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটটিতে ঢুকতে পারেননি। মার্কিন এ সংস্থাটির অধীনে ১০ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করে। ক্ষমতায় বসেই ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেন; তার ওই নীতি এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে তুমুল ওলটপালট সৃষ্টি করেছে। আলাপচারিতায় মাস্ক মার্কিন সরকারের ব্যয় কমানো এবং জালিয়াতি নিয়েও অনেক কথা বলেন। আগামী বছর ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ১ ট্রিলিয়ন ডলার কমাতে পারবে বলেও প্রত্যাশা তার। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সেজে বা অনলাইনে ভুয়া আইডি তৈরি করে ‘সংঘবদ্ধ বিদেশি জালিয়াত চক্র’ বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিচ্ছে বলেও দাবি করেন এই ধনকুবের। এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি মাস্ক, কীভাবে ১ ট্রিলিয়ন ব্যয় কমানো যাবে সে সম্বন্ধেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি তিনি। এমন এক সময়ে এই অনলাইন আলাপচারিতা সামনে এলো যখন মার্কিন ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় মাস্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই ট্রেজারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থার হয়ে প্রতি বছর ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ছাড় হয় এবং এতে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, ট্যাক্স রিফান্ডসহ সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া কোটি কোটি মার্কিনির ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত আছে। সিনেট ফাইন্যান্স কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্য পিটার ওয়েলশ কেন মাস্ককে পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেখানে করদাতাদের ‘সংবেদনশীল তথ্য’ আছে, তার ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। -রয়টার্স