বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, নারী সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। এ প্রস্তাব কার্যকরের পথে সরকার পা বাড়ালে দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে। দেশের মুসলমানরা এখনো এতটা নির্জীব হয়ে যায়নি যে, আল্লাহর বিধানকে কটাক্ষ করার পরও তারা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেবে। তিনি বলেন, প্রস্তাব দেওয়ার জন্য নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যাদের
নিয়ে করা হয়েছে- এ জায়গাটিতে বড় ভুল হয়েছে। একপেশে লোকজন, যারা বাংলাদেশের সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আজকের সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার পুরোটাই প্রত্যাখ্যানযোগ্য। এটিকে চরম দৃষ্টান্তপূর্ণ উপস্থাপনা বলে আমরা চিহ্নিত করেছি। এ জাতীয় প্রস্তাবনা উপস্থাপনের জন্য এ কমিশনকে বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ প্রতিবেদন সরাসরি ইসলামের বিধান কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কোরআনের প্রতি কটাক্ষপূর্ণ প্রস্তাবনা। তিনি বলেন, প্রস্তাবনার সারকথা- পরিবার এবং সমাজব্যবস্থা ভেঙে পরিবারবিহীন সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করা। তারা সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। প্রস্তাবনার মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী সমাজকে সম্পূর্ণ বেহায়ার দিকে ধাবিত করা, যৌনকর্মকে উৎসাহিত করা, পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ঘৃণ্য অমানুষিকতা এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের প্রস্তাবনা দিয়েছে কমিশন। এটি অসম্পূর্ণ প্রস্তাবনা। সমাজব্যবস্থায় সম্পদের অংশ পাওয়ার সঙ্গে অনেক বিষয় সম্পৃক্ত। যেমন খরচের দায়িত্ব কার, ভরণপোষণের দায়িত্ব কার। এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হলো সম্পদের মালিকানা কার কতটুকু হবে। সংসারে কার দায় কতটুকু। পরিবার, বিয়ে, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, সন্তানের লালন-পালন এ জাতীয় সব বিষয়। তারা বিয়ের ক্ষেত্রে সব ধর্মাবলম্বীর জন্য অভিন্ন আইনের প্রস্তাবনা করেছে। অর্থাৎ সব ধর্মাবলম্বীর একই বিধানে, নিয়মে ও একই আইনে বিয়ে হবে। তিনি বলেন- বিয়ে-বন্ধন রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিষয় নয়। এটি স্পষ্ট ধর্মীয় বিষয়। ধর্মীয়ভাবে বিয়েবন্ধনের ধর্মীয় পদ্ধতি রয়েছে। বিচ্ছেদেরও পদ্ধতি রয়েছে। এটা তো কোনো মানুষ বা রাষ্ট্রের নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নয়। রাষ্ট্র শুধু পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিশেষ করে ইসলামের বিষয়ে। ইসলামের বিষয়গুলো একেবারেই নির্দিষ্ট। উত্তরাধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে কোরআনে বলা আছে কীভাবে তা বণ্টন হবে। স্পষ্টভাবে বর্ণিত আল্লাহর বিধানকে সরাসরি বিকৃত বা পরিবর্তন করার প্রস্তাবনা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মেনে নিতে পারে না। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান এবং কমিশন বাতিল করা হলো মূল দাবি। এ দাবিকে কেন্দ্র করে আরও তিনটি সমন্বিত করে চার দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টা থেকে হেফাজতে ইসলামের ডাকে সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এ সমাবেশের আহ্বানকারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তবে এ দাবির সঙ্গে বাংলদেশের সব ইসলামপন্থি একমত। আমরা আশা করছি, ধর্মবিরোধী না- এ ধরনের রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যক্তিবর্গ এ দাবির সঙ্গে একমত। সমাজ ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করার যে ভয়াবহ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, তা যদি কার্যকর হয় এবং এ পথে যদি সরকার পা বাড়ায় তাহলে দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে। কারণ এ দেশের মুসলমানরা এখনো এতটা নির্জীব হয়ে যায়নি যে, আল্লাহর বিধানকে কটাক্ষ করার পরও তারা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ ধর্মীয় বিধান। যেখানে আল্লাহ বলেছেন, কোরআন পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে বৈষম্য দূর করে মানুষের মধ্যে ইনসাফ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেক্ষেত্রে কোরআনের দর্শন বোঝার বিষয় আছে। আমরা মনে করি, প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যাদের নিয়ে করা হয়েছে এ জায়গাটিতে বড় ভুল হয়েছে। একপেশে লোকজন, যারা বাংলাদেশের সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বিদেশি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারা পেট্রোনাইজড। বাংলাদেশের মূল ধারা ও নারী সমাজের চিন্তা-চেতনা থেকে অনেক দূরে এমন বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষকে দিয়ে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিকৃত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। মহাসমাবেশে আমরা বড় ধরনের ঘোষণা দেব, কোনোভাবেই এটি বাস্তবায়িত হতে দেব না। আমরা চ্যালেঞ্জ নেব, যদি সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে চায়। মহাসমাবেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক পরিচয়ে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি না। আমরা সবাইকে বলছি। যারাই বাংলাদেশের সমাজ ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল সবারই এটা দাবি। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কাজেই এটি যে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে দাওয়াত করা হচ্ছে না। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সচেতন সব শ্রেণির নাগরিকদের এ সমাবেশে আহ্বান করা হয়েছে।