ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ওপর গোটা বিশ্বের তীক্ষè নজর ছিল। সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি হামলা ও সামরিক তৎপরতায় দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে একটি ‘গোপন’ কিন্তু ভয়াবহ গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কৌশলী ও ত্বরিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই পদক্ষেপের পেছনে ছিল মার্কিন প্রশাসনের কৌশলগত চাপ। গতকাল প্রকাশিত সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, শুক্রবার (৯ মে) সকালে যুক্তরাষ্ট্র কিছু ‘উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক’ গোয়েন্দা তথ্য পায়, যা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনাকে ঘিরে বড় ধরনের হুমকির ইঙ্গিত দেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবহিত করেন এবং এরপর সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন। মোদিকে তিনি সাফ জানান যে, হোয়াইট হাউসের ধারণা অনুযায়ী, চলমান সংঘাত যদি থামানো না হয়, তবে তা মারাত্মক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। তিনি মোদিকে উৎসাহ দেন যেন পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে উত্তেজনা কমানোর পথ খোঁজা হয়। মার্কিন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার পথ খুলে দেওয়া এবং সামরিক সংঘাতকে কূটনৈতিক সমাধানে রূপান্তর করা। তবে গোয়েন্দা তথ্যটি কি ছিল, তা সিএনএন প্রকাশ করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা- যেমন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস ঘনিষ্ঠভাবে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরপরই মার্কিন কূটনীতিকরা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাতভর যোগাযোগ রাখেন এবং একইভাবে পাকিস্তানের পক্ষের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যান। সিএনএনের তথ্যানুযায়ী, মোদির সঙ্গে ভ্যান্সের ফোনালাপ ছিল এই পুরো প্রক্রিয়ার একটি মোড়ঘোরা মুহূর্ত। এমনকি যুদ্ধবিরতির চুক্তির খসড়ায় যুক্ত না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলী ভূমিকা দুই পক্ষকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার পথ সুগম করে। ফলে পাল্টাপাল্টি হামলার চার দিন পর অনেকটা আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। সিএনএন বলছে, প্রাপ্ত তথ্যগুলো সংবেদনশীল হওয়ায় এর ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেননি কর্মকর্তারা। তবে তারা বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে জেডি ভ্যান্স নিজেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করেন। সিএনএন আরও বলছে, যুদ্ধবিরতির চুক্তির খসড়া তৈরিতে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্ত ছিল না। তবে তারা বিষয়টিকে দুই পক্ষকে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার অংশ হিসেবে দেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মোদির সঙ্গে ভ্যান্সের ফোনালাপটি ছিল যুদ্ধবিরতির এই প্রক্রিয়ায় নাটকীয় মোড়। প্রসঙ্গত, ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ ঘোষণার পরই ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই দেশই। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, শনিবার বিকাল ৫টা থেকে স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী পাকিস্তানের দিকে সব ধরনের গুলি চালানো বন্ধ রাখছে। একই সময় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দারও টুইট বার্তায় জানান, পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সিএনএন বলছে, এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি ইতিবাচক অর্জন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশ্ব এখন অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, তবে সবার চোখ এখন দুই দেশের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকে। গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্ব, দ্রুত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতে মোদির সঙ্গে ভ্যান্সের ফলপ্রসূ আলাপ- সবকিছু মিলিয়ে এ যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে একটি সময়োপযোগী এবং কার্যকর কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকটে এমন উদ্যোগ কূটনীতির শক্তিকে আরও দৃঢ় করবে।