বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা এ মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নেই। প্রশাসনের মধ্যে এখনো বিগত স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে। কাজেই সেই ভূত এবং বর্তমানে নতুন কোনো ভূত যদি থাকে, তারা কী ষড়যন্ত্র করছে? সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি আমরা সচেতন না হই, এ দেশকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। যারা মব তৈরি করছে তারা কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না? তাদের প্রতি সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত আছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গত বছরের গণ অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হন। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
তারেক রহমান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা বারবার বলেছি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এরপরও কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না- তা সরকারের কাছেই প্রশ্ন। তিনি বলেন, যুবদলের একজন কর্মীকে রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। অথচ বিএনপি এ নিয়ে কথা বললে, বলা হয় আমরা লাশের রাজনীতি করছি। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আজকে থেকে তিন মাস আগে জুলাই সনদের ব্যাপারে কী বক্তব্য, কী অবস্থান- সবকিছু ব্যাখ্যা করে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে। অথচ কিছু কিছু নন ইস্যুকে ইস্যু তৈরি করে একটি বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশবাসীর সামনে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশটি কারোর একার না, কোনো রাজনৈতিক বা একক দলের না, দেশটি সমগ্র বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের। দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। কাজেই এ দেশকে নিয়ে আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে। কাজেই দেশের মধ্যে কারা কী করছে? কারা কী ভূমিকা রাখছে? অতীতে কারা কী বলেছে? কারা কী বর্তমানে বলছে? বলার মধ্যে পার্থক্য কী? কাদের কী অবস্থান? ঘন ঘন কারা কী পরিবর্তন করছে? এসব বিষয়ে দয়া করে আপনারা নজর রাখবেন। তারেক রহমান আরও বলেন, আমি আজ থেকে ৮-৯ মাস আগে বলেছিলাম, অদৃশ্য শত্রু আছে। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে সেই অদৃশ্য শত্রু। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল, জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল। সভায় একজন শহীদ বাবার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র ছিল- আমরা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছি, কিন্তু আমরা বিজয় অর্জন করলেও ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এখানে যে শহীদের বাবা প্রশ্ন তুলেছেন তার সঙ্গে মিলিয়ে আমরাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একই প্রশ্ন করতে চাই।
হত্যাকারীদের বিচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বহু নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও অনেক দলের নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এমনকি নিরপেক্ষ অনেক মানুষও শহীদ হয়েছেন- দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে। আগামীতে বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে এসব হত্যার বিচার সুষ্ঠুভাবে হবে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুরান ঢাকায় মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনার অতি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন আর কিছুদিন ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করুন গণতন্ত্রের জন্য এবং সবাইকে বিরত রাখুন কেউ যেন অন্যায় কাজ করতে না পারে।