এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন এমন প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে তারা স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও একমত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ এ কথা জানান।
বৈঠকে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলাম কিন্তু সেটা বলা হয়নি। সেটা হলো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। সনদে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর উল্লেখ করব। এ সময় তিনি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ একটি শর্ত দিয়েছিলেন, সেটা কি এখনো আছে? পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসন ১০০-তে উন্নীত করা নিয়ে সবাই একমত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এটি প্রস্তাব করেছি। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের সরাসরি মনোনয়ন দিতেও সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যোগ করতে বিএনপির পক্ষ থেকে মত দেওয়া হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে দলগুলো একমত হয়েছে। তবে জাতীয় সংসদে প্রণীত আইন দ্বারা এটি গঠিত ও পরিচালিত হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগের নিষ্পত্তিই কমিশনের উদ্দেশ্য হবে। পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও জবাবদিহি নিশ্চিতেই কমিশন গঠন করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আশাবাদ জানিয়ে বলেন, যেভাবে আলোচনা চলছে ৩১ জুলাইয়ের আগেই ঐকমত্য কমিশনের কাজ শেষ হবে। পুলিশ কমিশন বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে, যা পুলিশের জবাবদিহি, দায়বদ্ধতা ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে চলমান সংলাপ সমাপ্ত করা কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করা। সনদের প্রাথমিক খসড়া কমিশন তৈরি করেছে। সোমবারের মধ্যে সে খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে। আমরা মনে করি মতামত দিলে সেটা সন্নিবেশিত করা হবে। আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০টি বিষয়ে আমরা ঐকমত্য হয়েছি। ৭ বিষয় অসমাপ্ত আছে, ৩টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি আশা করছি, অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করে আমরা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে পারব বা চূড়ান্তে উপনীত হতে পারব। আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করছেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টায় অবশ্যই সফলতা আসবে। এই বিশ্বাস এবং আস্থা আমাদের রাখা দরকার। ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা খসড়া নিয়ে এখানে কোনো আলোচনা করব না। যদি বড় ধরনের কোনো মৌলিক আপত্তি ওঠে তাহলে আমরা সেটা ফ্লোরে আনব না হলে আনব না। আলাদাভাবে যদি আপনারা কোনো মতামত দেন, সেগুলো সংযোজন করেই চূড়ান্ত সনদ হবে। সেখানে পটভূমি থাকবে, প্রক্রিয়া থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গাগুলো থাকবে।
চলমান এই সংলাপে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা ছাড়া ৩০টি দল অংশ নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া।