সরকারকে অত্যাবশ্যকীয় (জীবন রক্ষাকারী) সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাম নির্ধারণের গেজেট প্রকাশের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে এই নির্দেশনা এসেছে। সাত বছর আগে জারি করা এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল এই রায় দেন আদালত। রায়ে ১১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বাদে বাকি ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ওষুধ শিল্পমালিকদের হাতে ছেড়ে দিয়ে তিন দশক আগের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধের দাম সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী।
আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির। আর ওষুধ মালিক সমিতির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস কে মোরশেদ। পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশের ১১ ধারায় সরকারকে ওষুধের দাম নির্ধারণ বা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা সীমিত করে তা তুলে দেওয়া হয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর হাতে। ফলে কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে আসছিল। তিনি বলেন, এই পরিপত্রটি চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১৮ সালে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট করে। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছর ৩১ জুলাই হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা পরিপত্রটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ওষুধ শিল্পমালিকদের হাতে থাকলে ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকে। ১৯৯৪ সালের পরিপত্রটি নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। ফলে পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুধু তাই না, সরকারকে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা গেজেট প্রকাশ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।