নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ঘোষিত নির্বাচনি রোডম্যাপকে অস্পষ্ট বলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি : ইসি ঘোষিত এ রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দেশের সমস্যা সমাধানে নির্বাচন দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা নির্বাচনে বাধা দেওয়া কিংবা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যারা হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এবারের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে আগেও সহযোগিতা করেছে, সামনেও সব ধরনের সহায়তা করবে।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচনি রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, মানুষ একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে। গতকাল রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচনমুখী হচ্ছে। নির্বাচনের পর দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কারণ নির্বাচিত সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।
নির্বাচনি রোডম্যাপ অস্পষ্ট : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের রুটিনওয়ার্ক কাজ ঘোষণা করেছে, এটা ভালো। তবে আইনসহ অনেক বিষয়ে অস্পষ্ট রয়েছে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে। এগুলো জাতির কাছে পরিষ্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে ভালো হতো। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে কোন আইনের ভিত্তিতে হবে সেটার উল্লেখ নেই। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম কী হবে সেটাও উল্লেখ নেই। নির্বাচনি মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ নির্বাচনি আনুষঙ্গিক কার্যক্রম জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। নির্বাচনি অপরিহার্য বিষয়গুলো সেটেল করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরে রোডম্যাপ ঘোষণা দিলে ভালো হতো।
সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল : জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে দলটি। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিচার ও সংস্কার। সেই লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জাতীয় নাগরিক পার্টিও নিজেদের মতামত তুলে ধরে। এ সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদের খসড়া কিছুদিন আগে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় এবং এ বিষয়ে আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরে তা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা একপাক্ষিকভাবে নির্বাচনের সময় ঘোষণা আমাদের হতবাক করলেও বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তা মেনে নিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। আমরা আশা করেছিলাম, এর নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশের পূর্বেই সরকারের সংস্কারবিষয়ক পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, অজানা কারণে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী দফার বৈঠক পেছানো হয়েছে এবং এখনো জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপায় নির্ধারণ হয়নি। জুলাই সনদ চূড়ান্ত না করে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ততে উপনীত না হয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, আরিফ সোহেল প্রমুখ।
রোডম্যাপকে স্বাগত- জোনায়েদ সাকি : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন রোডম্যাপেরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আমরা এই রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। গতকাল গণমাধ্যমকে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় সাকি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক বড় দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। তা না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজনৈতিক দলগুলোই।
রোডম্যাপ কার্যকর হতে হবে জুলাই সনদে : খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, রোডম্যাপ কার্যকর হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। এর পূর্বেই জাতীয় ঐকমত্যের আলোকে জুলাই সনদ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। তা না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। পেশিশক্তি ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা নতুন বাংলাদেশে সবার। নির্বাচনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন এখনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে জনরায় শুরু থেকেই রয়েছে। সরকারকে জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।