ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের কাছে ‘নতজানু’ না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘শক্ত’ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘আমরা আপনাদেরকে সব সহযোগিতা করব। আমরা চাই আপনারা শক্ত থাকেন, আপনারা সিদ্ধান্তগুলো নেন। ইউ হ্যাভ দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য অথোরিটি।
সরকার দিয়েছে, সংবিধান আপনাদেরকে সেই অথোরিটি দিয়েছে। গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতা মঈন খান।’ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো পরিস্থিতি যে এখন নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের কাছে কোনো সুবিধা নেই, যেটা অতীতে আমরা দেখেছি। সরকারের কাছে নতজানু হয়ে ইলেকশন কমিশন থাকবে এভাবে কোনো দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারবে না। দিনের দ্বিতীয় ভাগে গতকাল মোট পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। বিএনপি ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও নতুন দল বাসদ মার্কসবাদী আলোচনায় অংশ নেয়।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে কমিটেড, সেই ভাবেই দায়িত্ব পালন করব। সুন্দর নির্বাচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ভূমিকা রাখবেন সেই আশা করি।
ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, আমি নির্দিষ্ট করে বলছি, এই যে ৬৪ জেলায় আপনারা সরকার থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে রিটার্নিং অফিসার বানান। আপনাদের বড় ম্যানপাওয়ার নেই, তবে এতটুকু ম্যানপাওয়ার তো আছে। আপনারা একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে, রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশন থেকে থাকবে, অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের কমিশনের কর্মকর্তাদের থেকে হবে। দেখবেন এই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কম্পিউটারে চারটা বাটন আছে। একটা হচ্ছে ডিসি, একটা হচ্ছে এসপি, একটা হচ্ছে টিএনও আরেকটা হচ্ছে ওসি। কম্পিউটারের বাটন চারটা টেপা হয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনি ফলাফল প্রিন্ট আউট হয়ে বের হয়ে আসে।
মঈন খান বলেন, এই পদ্ধতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং এটা বের হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় আপনারা নির্বাচনে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে, কোনো রিটার্নিং অফিসার, কোনো অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের বাইরে হবে না। আমি বিশ্বাস করি, এতে নির্বাচনে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে।
এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আপনারা করেন, আমরা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা আছেন, সবাই কথা বলবেন এই বিষয়ে।
বাংলাদেশ ‘ক্রান্তিকাল পার করছে’ মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, এই সময় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিয়মকানুন মেনে নির্বাচন করব। নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলব। প্রার্থীর অঙ্গীকারনামার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারনামা এবার দিতে হবে, এটা আগে ছিল না। ইসি নিয়মকানুনের বেড়াজাল যত বাড়াবে, তত বিষয়টি জটিল হবে। ধর্মকে যাতে কোথাও ‘রাজনৈতিকভাবে’ ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘লক্ষ্য রাখতে’ বলেন মঈন খান। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপের এটি ছিল শেষ পর্ব, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত ও প্রস্তাব দিয়েছে।