গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কোনো দল নির্বাচনি জোট করলেও প্রার্থীদের স্ব স্ব দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একই সঙ্গে চাপ থাকলেও ইসি যেন এ সিদ্ধান্তে অটুট থাকে সে দাবি জানিয়েছে দলটি। তবে এবার ভোটের প্রচারে পোস্টার বন্ধ করে দিয়ে নানা ধরনের ‘অমূলক’ বিষয় যুক্ত করাসহ আচরণবিধি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া নির্বাচনি প্রচারণায় তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দলটি। অপরদিকে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে আইনবিধি চূড়ান্ত করায় ইসির সমালোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। জোট মনোনীত প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বাছাই উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেন তিনি। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সকালের পর্বের সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলোর নেতারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে এতে অংশ নেন যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা ও এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি তাসনিম জারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জোট করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে- ইসির যে সিদ্ধান্ত, এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
আশা করি, কোনো বড় দলের কাছে নতি স্বীকার করবে না ইসি। এ ছাড়া গণভোটের বিষয় নিয়ে স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনাও চান এই এনসিপি নেতা। তিনি বলেন, আমাদের এ ইলেকশনের বড় একটি বিষয় হচ্ছে গণভোট। গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে? কীভাবে আপনারা এটা বাস্তবায়ন করবেন? এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমরা কবে পাব? কবে আমরা প্রচারণা করতে পারব- সে বিষয়ে জানাবেন। আমরাও কিছু কলাবোরেশন কাজ করতে পারব বলে আশা করি। এ সময় ভোটকে সামনে রেখে নারীরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হলে তা মনিটরিংয়ের পাশাপাাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নির্বাচনি পরিবেশ উৎসবমুখর করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান পাটওয়ারী। এ ছাড়া প্রবাসী ভোটারদের গণভোটে সম্পৃক্ত করতে ব্যাপক প্রচারণা এবং ভোটের আগেও যারা ১৮ বছর হবে তাদের তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, নির্বাচনি আমেজ মানে পোস্টারিং, মাইকিং, জনসম্পৃক্ততা ও জনসভাকে বুঝি। এখানে এমন অন্যায্য বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে, এটা বাস্তবায়নের করার কোনো সক্ষমতা ইসির নেই। এটা নিপীড়নমূলক আইন হবে যদি নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে করে, শক্তিশালী কারোর বিরুদ্ধে একই বিধান ব্যবহারের সক্ষমতাও আপনার (ইসি) নেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে বা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের- তার ওপরে আচরণবিধি প্রয়োগ ব্যবহার করতে হবে। প্রার্থী তার দলের বর্তমান প্রধানের ছবি ছাড়া অন্যদের ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলছি, প্রথম টেস্ট হবে তারেক রহমানের ছবি বিএনপির প্রার্থী ব্যবহার করলে প্রথমেই তার ওপরে আচরণবিধি প্রয়োগ করে সক্ষমতা দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিধি লঙ্ঘনের শাস্তি বাস্তবায়ন করা হবে কীভাবে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কীভাবে কাজটি করা হবে তা স্পষ্ট নেই। তফসিল ঘোষণার পর অভিযোগ পেলে তদন্ত করার জটিলতা এবং এত অল্প সময়ে এত বার্ডেন নেওয়ার লোকবল, সক্ষমতা ইসির নেই। কমিশনের প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু কতদিনের মধ্যে কীভাবে করবে তা বলা নেই। ইসির কর্মকর্তা যদি নিরপেক্ষ না থাকে, কোনো প্রতিকারের বিষয় এখানে নেই।
পোস্টার-ফেস্টুনের পক্ষে গণসংহতি : অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে আইনবিধি চূড়ান্ত করায় ইসির সমালোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। তিনি জোটের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বাছাই উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, জোটের প্রতীক নিয়ে বাধা রাখা সমীচিন নয়। অনেকে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করবেন। জোটগতভাবে নির্বাচন করলে অন্য দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রাখা দরকার। এ ছাড়া সংসদ ও গণভোটের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা রাখার সুপারিশ করেন জুনায়েদ সাকি। ভোটের আগে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য একটা মনিটরিং কমিটি হওয়া দরকার। দলের প্রতিনিধিসহ সরকার, ইসির প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি হতে পারে। পোস্টার ও ব্যানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজার হাজার ফেস্টুন ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় রয়ে গেছে। প্রতি ওয়ার্ডে একটা থাকবে বলা হচ্ছে, কিন্তু অনেকে বেশি রাখছে মনিটরিং করতে হবে। পোস্টারও বন্ধ করে দিয়েছেন। পোস্টার-বিলবোর্ডের বিষয়ে রিথিংক করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের পরিপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাই। যে ক্ষমতায় সবকিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ভোটের আগে সাত দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর র্বিাচন চই, একটা ভোট উৎসব চাই।
ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন।