শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেন্টাল রুট ক্যানেল ও ডেন্টাল ক্রাউন

ত্রুটিপূর্ণ দাঁতকে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চিকিৎসা রুট ক্যানেল এবং ডেন্টাল ক্রাউন সম্পর্কে জেনে নিন।

ডেন্টাল রুট ক্যানেল কী?

দাঁতের একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি রুট ক্যানেল। দাঁতকে সংরক্ষণ করার জন্য এ চিকিৎসা করা হয়। দাঁত যে মাড়ির সঙ্গে লেগে থাকে, সেটি একটি শেকড়ের সঙ্গে লেগে থাকে। দাঁতের মাড়ির শেকড়ের একটি ক্যানেল থাকে। ওই ক্যানেলের যে সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকে, দাঁতের ভিতরে যে পাল্প টিস্যু বা দন্ত্যমজ্জা বলি, সেটার চিকিৎসা করাকেই সাধারণত রুট ক্যানেল বলা হয়।

 

কেন রুট ক্যানেল করানো হয়?

সাধারণত ডেন্টাল ক্যারিজ হয়ে ওটা প্রথমে অ্যানামেলকে ক্ষয় করে। এরপর ডেনটিন ক্ষয় করে। যখন পাল্প টিস্যুতে এ ক্ষয় চলে যায়, রোগীর অসম্ভব ব্যথা হয়। এ ব্যথার কারণে ক্যানেল করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে কোনো সমস্যা হলে বা দাঁতে যে কোনো ধরনের আঘাত পেলে, তখন দাঁতের রুট ক্যানেল করে থাকি।

 

ডেন্টাল ক্রাউন কতটা জরুরি

প্রথমেই বলে রাখি রুট ক্যানালের কাজ হলো ইনফেকশন ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা। আর ক্রাউনের উদ্দেশ্য হলো দাঁতকে পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেওয়া। আপনি যদি শুধুমাত্র রুট ক্যানাল করেই ফেলে রাখেন তবে দাঁতের অবশিষ্ট অংশ কামড় লেগে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া রুট ক্যানেলে দাঁতের ভিতরের ইনফেক্টেড মজ্জা বা পাল্পকে বের করে আনা হয়। এ পাল্প ডেনটিনকে পানি ও নিউট্রিশন সাপ্লাই দেয়। কিন্তু এ পাল্প অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তা বন্ধ থাকে। রুট ক্যানেলের মাধ্যমে পাল্প আবার সচল হলেও পানি এবং নিউট্রিশন সাপ্ল­াই দিতে পারে না। অর্থাৎ ডেনটিন ভংগুর হওয়ার পথেই থাকে। আর এ ডেনটিন টিকিয়ে রাখতে ক্রাউন বা ক্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

ডেন্টাল ক্রাউনে অসুবিধা

ডেন্টাল ক্রাউন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি। যার ফলে পাশের দাঁতে খাবার জমে থাকার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি দাঁতের পাশের মাড়ি ধীরে ধীরে সরে যায়। এতে দাঁতের গোড়ার শক্তি কমে যায়। ফলত এক সময় দাঁত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এ ছাড়া যদি কোনো কারণে তা ক্রাউন ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে তাতে ক্রাউনের উপরিভাগে ফাটল ধরে। এক সময় ফাটা অংশটি ধারালো হওয়ার কারণে জিহ্বা বা মুখের ভিতরের অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নানা প্রদাহ রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ডেন্টাল ক্রাউনে সতর্ক থাকা উচিত।

 

সতর্কতা ও পরিচর্যা

ডেন্টাল ক্রাউন লাগানোর পর বিশেষ যতœ অপরিহার্য। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি ম্যাসাজ করুন। এতে মাড়ি ভালো থাকবে এবং গোড়া মজবুত হবে। দুই দাঁতের মাঝখানে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। ফলে দাঁতের মাঝে খাবার জমার ভয় থাকবে না। ডেন্টাল ক্যারিস বা মাড়ির প্রদাহজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। প্রতিদিন একবার লবণ গরম পানি দিয়ে কুলি করুন। এতে খাবারের অবশিষ্ট কণা বের হওয়াসহ দাঁত ও মাড়ির নানাবিধ সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবেন। কখনো অসতর্কতায় ক্যাপ খুলে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

 

লেখক-

ডা. আহমাদ বুলবুল (ডেন্টাল সার্জন)

ডেন্টাল বিভাগ, বারডেম ঢাকা

সর্বশেষ খবর