বাংলাদেশ এখন অপুষ্টির দ্বৈত বোঝা বহন করে চলেছে। অর্থাৎ একাধারে আমাদের জনগোষ্ঠীতে পুষ্টির অভাব এবং অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা বিদ্যমান। অতিরিক্ত ওজন/স্থূলতাকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এটি দেহে আরও অনেক রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি রোগের কারণও বটে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এই রোগের বিরুদ্ধে লড়ছে কিন্তু সামান্য সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চলাই পারে একে রুখতে। যারা এই স্থূলতা বা ওজনাধিক্যে আক্রান্ত তাদের উত্তরণের উপায়ও খুব কঠিন কিছু নয়। আজ জানব অতিরিক্ত ওজন কমানোর বা ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের উপায়।
খাবার তালিকায় আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি : আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় শর্করার পরিমাণ কমিয়ে যদি আমিষের পরিমাণ বাড়ানো যায় তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ বিষয়। খাদ্য তালিকায় ডিম, দুধ, মাছ এবং চর্বি ছাড়া মাংস রাখুন। তাছাড়া আমিষ জাতীয় খাবার হজম ও বিপাক ক্রিয়ার জন্য তুলনামূলক বেশি তাপ শক্তি ব্যয় হয় ফলে ওজন কমে।
ঠাণ্ডা পানি পান : অনেকেই বলেন গরম পানি খেলে ওজন কমে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমেরিকার ও যুক্তরাজ্যের একাধিক গবেষক দল গবেষণা করে দেখেছেন যে ঠান্ডা পানি খেলে ওজন কমে। কেননা ঠান্ডা পানিকে দেহের উপযোগী করে ব্যবহার করতে শক্তি ব্যয় করতে হয় ফলে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ও তার ফলে ওজন কমে।ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম : প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০ মিনিট হাঁটা বা অন্য যে কোনো কায়িক পরিশ্রমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। এ জন্য জিমে যেতে হবে তা জরুরি নয় বরং ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা বাসায় বসেও ব্যায়াম করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
গ্রিন টি বা কফি পান : গ্রিন টি ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে তাই আপনার পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো গ্রিন টি ও কফি পান করুন।
মসলাযুক্ত খাবার খান : যাদের মসলাযুক্ত খাবার খেলে অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালা পোড়া করে না তারা মসলাযুক্ত খাবার খেতে পারেন। যেমন- রান্নায় গোল মরিচ, হলুদ, আদা, রসুন, জায়ফল ও জয়ত্রী ব্যবহারের ফলে বিপাকহার বৃদ্ধি পায় তাই ওজন হ্রাস পায়। তবে শুকনা মরিচ না ব্যবহার করে কাঁচামরিচ ব্যবহার করাই উত্তম।
ভিনেগার : খালি পেটে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে তা ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং ওজন কমায়। প্রতিদিন ২০ মিলি ভিনেগার খাওয়া অনুমোদিত।
আদা কুচি : আদা ওজন কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদা বিপাক হার বাড়ায় ও সুপার ফুড হিসেবে কাজ করে।
Branch Chain Amino Acid : Branch Chain Amino Acid থাকে যেসব খাবারে যেমন- সয়া, কাঠবাদাম, বীচি ও ডাল এই খাবারগুলো মানব শরীরের বিপাক হার বাড়ায় তাই অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য ভালো কাজে আসে।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের পর্যাপ্ততা : ওজন আধিক্য বা স্থূলতার সঙ্গে কিছু ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব জড়িত। যা হলোÑ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। খাদ্য তালিকায় এগুলোর পর্যাপ্ততা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম : দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি কেননা ঘুম ঠিকমতো না হলে শরীরে হরমনের অসামঞ্জস্যতা হয় তাই ওজন বৃদ্ধি ঘটে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই উপকারী।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করে সহজেই ওজনাধিক্য বা স্থূলতা হ্রাস করা সম্ভব।
লেখক-
মাহফুজা আফরোজ সাথী,
প্রধান পুষ্টিবিদ, ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।