অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়। অস্টিওপরোটিস হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁজরা বা ফুলকো হয়ে যায় বা যাতে অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড়ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।
পঞ্চাশ বছর পেরোবার পর থেকে শরীরের হাড়ক্ষয় বা এর বিভিন্ন লক্ষণ প্রতিভাত হতে থাকে। এর শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। এক পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। যাদের ক্ষেত্রে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। মহিলাদের মাসিক-পরবর্তী হাড়ক্ষয়ের গতি খুব বেগবান হয়। এছাড়াও অনেক কারণ বা ঝুঁকি হাড়ক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে (পরে আলোচিত হলো)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত মহিলা হাড়ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই। অন্ততপক্ষে ৪০% মহিলা ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময় স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হবেন (যা হাড়ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকবে)। আর যাদের একবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরবর্তী হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং উরুর হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ১-৪ গুণ বাড়ে। তবে, বাংলাদেশের মহিলা-পুরুষদের মাঝে হাড়ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল।
হাড়ক্ষয়ের নানা ঝুঁকি
অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি
১। বয়োবৃদ্ধি
২। স্ত্রীলিঙ্গ
৩। জিনগত ত্র“টি
৪। অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা
৫। হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার)
৬। অতি খর্বাকৃতি
সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি
১। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
২। ধূমপান
৩। অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি]
৪। ক্ষীণকায় দৈহিক আকার
৫। আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস
৬। বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস।
৭। খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু
৮। কোমল পানীয় ও মদ্যপান
উপসর্গ
প্রথমত কোনো শারীরিক লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরুদ-ে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।
শনাক্তকরণ : অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে। কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্য, কিছু আবার নানা ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য। বিএমডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভালো।
চিকিৎসা : এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা। এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।
যেহেতু, হাড়ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে তাকানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই একে আগেভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যেই হাড়ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।
আর হাড়ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর বিবেচনা করা যেতে পারে।
♦ নিয়মিত ব্যায়াম
♦ স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা
♦ পুষ্টি নিশ্চিতকরণ
♦ ধূমপান ত্যাগ
♦ প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন
লেখক-
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।