শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

রক্তে অতিমাত্রায় কলেস্টেরল ও করণীয়

রক্তে কলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো দুই ধরনের হয়থ নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য।

রক্তে অতিমাত্রায় কলেস্টেরল ও করণীয়

ছবি: ইন্টারনেট

বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যু বাংলাদেশের সব মৃত্যুর মধ্যে অন্যতম। আর এ রোগের পেছনে অন্য কারণসমূহের (রক্তে গ্লুকোজ বা বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, বংশানুক্রমিক সংশ্লিষ্টতা) পাশাপাশি মূলত অতিমাত্রায় কলেস্টেরল বিশেষ করে খারাপ কলেস্টেরল বা LDL cholesterol -এর আধিক্য তথা ভালো কলেস্টেরল বা HDL cholesterol -এর স্বল্পতাকে বোঝায়। রক্তে LDL cholesterol বেশি থাকলে, চর্বি করোনারিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে, যাকে Plaque  বলা হয়, অন্যদিকে ভালো কলেস্টেরল বা HDL cholesterol রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধাদান করার মাধ্যমে Atherosclerosis Process -কে বাধাগ্রস্ত করে। উল্লেখ্য, Familial Hypercholesterolemiai কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকার সম্ভাবনা কিশোর তথা যুবকরা।

জেনে রাখা ভালো, কলেস্টেরলকে আমাদের শরীরের বিশেষ করে জীবকোষের মেমব্রেনের একটা অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান এবং  আমাদের শরীরের স্টেরয়েড হরমোনের জন্য মূল উপাদান বলা হয়। অ্যাড্রেনাল হরমোন, করটিসল, অ্যালডেসটেরন, প্রজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন সমূহ ভিটামিন সির সংশ্লেষে প্রিকারসার মলিকুল হিসেবে কাজ করে।

আমরা দুই ভাবে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় কলেস্টেরল জোগান দিই। অ্যানিমল ফ্যাট ও ভেষজ ফ্যাট। রেড মিট (গরু বা খাসির মাংস), পায়া, গিলা, কলিজা, মগজ, চিংড়ি, ডিমের কুসুম থেকে পর্যাপ্ত অ্যানিমল কলেস্টেরল বা চর্বির জোগান পাই। এ ছাড়া লিভার বা যকৃৎ বিশেষ করে রাতে নিজস্ব কলেস্টেরল তৈরি করে, ফলে খাদ্যের মাধ্যমে গৃহীত চর্বি ও লিভারের তৈরি কলেস্টেরল আমাদের শরীরে এর আধিক্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিশ্রামের সময় অতিমাত্রার কলেস্টেরল রক্তনালিতে জমতে সহায়তা করে।

রক্তে সাধারণত চার ধরনের কলেস্টেরল যথা Total cholesterol, Triglycerides, HDL, LDL  নিয়মিতভাবে ক্ষতিকর পরিমাপক হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া LP(a), VLDL ও রক্তের চর্বির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রক্তে স্বাভাবিক মাত্রার TC ২০০ গ্রাম/ডে. লি, LDL ১০০ গ্রাম/ডে.লি, HDL ৩৫ গ্রাম/ডে.লি ও TG ১২৯ গ্রাম/ডে. লির সমান। এর মধ্যে ভালো কলেস্টেরল বা হাইডেনসিটি কলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কম থাকা ভালো।

অতিমাত্রায় ক্ষতিকর কলেস্টেরল প্রভাবে হৃৎপিন্ডের নিজস্ব রক্তনালিতে ব্লক করে হার্ট অ্যাটাক হওয়া, মস্তিষ্কের রক্তনালিতে ব্লক হয়ে স্ট্রোক হওয়া, কোনো ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হওয়া, আথোরোসেকরোসিসসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া হাত-পায়ের রক্তনালিতে চর্বি জমে রক্তপ্রবাহের ব্যাঘাত ঘটানোসহ প্রদাহ তথা অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে। সচেতনতা, জীবনযাপন পদ্ধতির স্বাস্থ্যসম্মত পরিবর্তন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবনের মাধ্যমে অতিরিক্ত চর্বির ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত থাকা সম্ভব।

চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন, বিশেষ করে অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, রেড মিট (গরু-খাসির মাংস), পায়া, গিলা, কলিজা, মগজ, পনির, বাটার তথা নারকেল, মেয়োনেজ কম খাওয়া বা প্রয়োজনে না খাওয়া ভালো।

নিয়মিত সন্ধ্যায় ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা।

দৈনিক সবুজ চা বা গ্রিন টি, টক দই, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, আলমন্ড, আভোগাডো রক্তে চর্বির মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। নিয়মিত চর্বির ওষুধ সেবনের ফলে লিভারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য প্রতি দু-তিন মাস অন্তর রক্তের চর্বির মাত্রা পরিমাপসহ  SGPT মাপা উচিত। SGPT  বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন কমানো যেতে পারে। মনে রাখা ভালো, ৫০ বছরের পর থেকে নারী-পুরুষ উভয়ের অনিয়ন্ত্রিত কলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষাসহ জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে কলেস্টেরল তথা হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, সন্ধ্যায় হাঁটা, জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণই পারে আমাদের সুস্থ রাখতে ও অতিরিক্ত চর্বির কারণে হৃদরোগসহ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ও হাত-পায়ের প্রদাহ তথা পচন থেকে বাঁচাতে।

পরিশেষে আর একটা ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা দরকার মনে করি। ছেলেমেয়েরা যেভাবে      অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুডের ওপর ঝুঁকে পড়ছে তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হৃদরোগসহ মারাত্মক ঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিয়মিত খেলাধুলাসহ ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করা উচিত এবং এ ব্যাপারে বাবা-মাকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

 

লেখক

অধ্যাপক ডা. এইচ এম ওয়ালিউল ইসলাম

কার্ডিওলজিস্ট, এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর