ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি হজের ফ্লাইট ছেড়ে গেছে এবং তা চলমান। হজ মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ এবাদত। প্রতিবছর অনেক ডায়াবেটিক রোগী হজ পালন করেন। ডায়াবেটিস রোগীদের হজ পালন করতে যে সমস্যা হতে পারে, সে বিষয়ে এ আলোচনা। হজে যাওয়ার শুরুতে নিজেকে এমনভাবে মানসিকভাবে তৈরি করে নিন, যেন দেহ মনে কোনো কষ্ট না থাকে।
হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতা শ্রমসাধ্য ব্যাপার। এ ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। হজে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি-
১. প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা থাকলে চিকিৎসা হজযাত্রার দুই মাস আগেই ডায়াবেটিস চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. হজে যাওয়ার কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিস টিকা ও ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে হবে।
৩. চিকিৎসকের কাছ থেকে পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিতে হবে।
৪. জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা করে নিতে হবে। (কমপক্ষে ৪৫ দিনের ওষুধ)
৫. অসুস্থতার দিনে (যেমন : ডায়রিয়া, বমি, সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি) আপনার করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামল ও ওআরএসের মতো ওষুধ সঙ্গে নিতে হবে।
৬. একটি ভালো গ্লুকোমিটার, স্ট্রিপ, লেনসেট ও অ্যালকোহল সোয়াব সঙ্গে নিতে হবে।
৭. ইনসুলিন ব্যবহার করলে ইনসুলিন ভায়াল, পেন, সিরিঞ্জ ও নিডল সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।ইনসুলিন সংরক্ষণের উপযোগী ফ্লাস্ক বা ঠাণ্ডা ওয়ালেট সঙ্গে নিবেন।
ইনসুলিন সংরক্ষণে করণীয় : মূল লাগেজে রাখলে ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে জন্য হাতের লাগেজে আপনার ইনসুলিন রাখুন। সৌদি আরবে গিয়ে এটি ফ্রিজে রাখুন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা নেই, সেজন্য ওই কয়েকদিনের জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজনমতো ইনসুলিন নিয়ে যাবেন। বাকি ইনসুলিন মক্কায় আপনার ফ্রিজে রেখে যাবেন।
৮. হাইপোগ্লাইসেমিয়া চিকিৎসার জন্য দ্রব্যাদি, যেমন : গ্লুকোজের ট্যাবলেট, চকলেট, জেল বা জেলি, জুস, খেজুর, মিষ্টি বিস্কুট বা কেক সঙ্গে রাখতে হবে।
৯. খাবার খেতে বা পেতে দেরি হলে তা মোকাবিলার জন্য কিছু খাবার ও পানীয় সঙ্গে রাখুন।
১০. আরামদায়ক ও সঠিক মাপের জুতা সঙ্গে নিতে হবে।
১১. সাদা ছাতা সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
১২. চশমা ব্যবহার করলে অবশ্যই প্লাস্টিকের তৈরি অতিরিক্ত এক জোড়া চশমা সঙ্গে নেবেন।
১৩. হজ ক্যাম্পে আগেই জানিয়ে রাখুন আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী। প্রয়োজনে হজ ক্যাম্পের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হজকালীন করণীয়-
১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া : অনেক সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ, ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার না করলে, বেশি খাওয়া-দাওয়া করলে রক্তের সুগার বেড়ে যেতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব ও পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। গ্লুকোজ মনিটরিং ও স্ট্রিপ দিয়ে কিটোন বডি টেস্ট করতে হবে। ইনসুলিন ও ওষুধের মাত্রা ঠিক রাখতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া : শারীরিক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়া ও খাবারের নিয়ম মেনে চলতে না পারার কারণে সুগার কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রতিরোধ : সব সময় কিছু খাবার যেমন গ্লুকোজ, চিনি বিস্কুট খেজুর সাথে রাখতে হবে, মাঝে মাঝে গ্লুকোমিটার দিয়ে সুগার টেস্ট করতে হবে। ইন্সুলিন ও মুখে খাওয়ার ওষধের পরিমাণ ২৫% কমিয়ে নিতে হবে। হজকালীন এনালগ ইনসুলিন ব্যবহার করলে হাইপোগ্লাসিমিয়া ঝুঁকি কমে। নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি খাবারের মধ্যবর্তী স্ন্যাকস খেতে হবে। অনিয়মিত খাবারের ক্ষেত্রে রোগীরা বাদাম, ফল এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ করতে পারেন।
৩. পানিশূন্যতা : অতিরিক্ত গরম ও ঘামে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। অ্যাজমা রোগীরা ঠাণ্ডা পানি না খাওয়াই ভালো।
৪.হিট স্ট্রোক : রোদে সাদা ছাতা ব্যবহার করুন। পানি ও ফলের রস বেশি পান করুন। সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে বাতাস করতে হবে, প্রয়োজনে নিকটস্থ মেডিকেল সেন্টারে নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২
বিডি প্রতিদিন/এমআই