রক্তচাপ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে সারাক্ষণ ওঠানামা করে। হার্ট সংকোচনের সময় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট প্রসারণের সময় চাপ কিছুটা কমতে থাকে এবং আবার পরবর্তী সংকোচনের সময় বৃদ্ধি পায় তাই রক্তচাপকে দুটি সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন- ১৩০/৮০ (মি.মি. পারদ)। তার মানে হার্ট সংকোচনের সময় ১৩০ প্রসারণের সময় ৮০ মি.মি. রক্তচাপ। যদি কারও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রার রক্তচাপ থাকে তবে এ অবস্থাকে উচ্চরক্তচাপ (হাই ব্লাডপ্রেসার) বলা হয়; আবার কারও এর চেয়ে কম রক্তচাপ থাকে তবে এ অবস্থাকে কম রক্তচাপ (লো ব্লাডপ্রেসার) বলা হয়ে থাকে। তবে ব্যক্তি ভেদে এই পরিমাপ কম বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায় পরিমাপের সঙ্গে শারীরিক উপসর্গ বিদ্যমান থাকলে সেই পরিমাপকে ওই ব্যক্তির জন্য লো প্রেসার হিসেবে গণ্য করা হয়। লো প্রেসার এর শারীরিক উপসর্গগুলো হলো, মাথা ঘোরা বা মাথা খুব হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা বা সরষে ফুলের মতো দেখা অথবা চোখে ঝাপসা দেখা, তার সঙ্গে বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি করা, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া, খুব বেশি দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি। যেসব কারণে লো ব্লাডপ্রেসার হয়ে থাকে তা তুলে ধরা হলো-
১. দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে : হাসপাতালে ভর্তি থাকা বা অন্য কোনো শারীরিক অসুখের জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে বা একটানা বিছানায় শুয়ে কাটালে।
২. গর্ভাবস্থায় : গর্ভবতী মায়ের গর্ভের প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেসার হতে পারে।
৩. প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ কমে গেলে- যেমন : গরমকালে খুব বেশি ঘাম হলে, দেহের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে। আঘাতের ফলে বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে।
৪. ঔষধ গ্রহণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে : যেমন- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঔষধ, হার্টের ঔষধ, শরীর থেকে পানি বের করার ওষুধ ডাইইউরেটিঙ্, পারকিনসনিজম রোগের ঔষধ, কিছু কিছু অবসাদগ্রস্ততার ঔষধ, যৌন অক্ষমতা প্রশমনের ঔষধ ভায়াগ্রা এবং অধিক মদ্যপান ইত্যাদি।
৫. হৃদরোগ : নাড়ির গতি কম হওয়া, হার্ট ফেইলুর রোগে আক্রান্ত হওয়া, হার্ট অ্যাটাক হওয়া এবং হার্ট ভাল্বের সমস্যা।
৬. হরমোনজনিত সমস্যা : থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা, এড্রিনাল হরমোন স্বল্পতা, প্যারাথাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার কমে যাওয়া ইত্যাদি।
৭. এলারজিক কারণ : ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য এবং সংক্রমণজনিত কারণে অ্যালারজিক রিঅ্যাকশান হলে।
৮. স্নায়ুবিক কারণে : বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, বমির ভাব হওয়া এবং কখনো কখনো রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোগী কিছুক্ষণ পর এমনিতেই জ্ঞান ফিরে পায়। সবচেয়ে বড় কথা রক্তচাপ নিয়ে সতর্কতা জরুরি। হোক সেটা আমাদের লো ব্লাডপ্রেসার অথবা হাই ব্লাডপ্রেসার।
ডা. এম. শমশের আলী, সহকারী অধ্যাপক,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১