ইউটেরাস বা জরায়ু মহিলাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান, এটা বাচ্চা ধারণ করে এবং এখান থেকে প্রতিমাসে পিরিয়ডের ব্লিডিং হয়। হিসটেরেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাস বা জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। ফলে এ অপারেশনের পর রোগীর পিরিয়ড হবে না এবং গর্ভধারণ করতে পারবে না। কারও ক্ষেত্রে এ অপারেশনের সময় ওভারি এবং ফেলোপিয়ান টিউবও অপসারণ করা হয়।
কি কি কারণে এ অপারেশন করা লাগতে পারে : এ অপারেশন বিভিন্ন কারণে করা হয়, যেমন- ইউটেরাস (জরায়ু), সার্ভিক্স (জরায়ুমুখ) বা ওভারির যেকোনো ক্যান্সার। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিনাইন (ক্যান্সার নয়) সমস্যার জন্যও ইউটেরাস ফেলা হয়, যেমন- ফাইবরয়েড টিউমার, এডিনোমাইসিস, পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাত, প্রচন্ড ব্যথা হলে ইউটেরাইন প্রলাপ্স/ জরায়ু নিচে নেমে আসা ইত্যাদি।
হিসট্রেকটমির বিকল্প কিছু আছে কি: প্রথমত অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়, যখন এভাবে কাজ না হয়, তখন অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশন ছাড়া সমাধানগুলো-ফাইব্রয়েড টিউমার: এক্ষেত্রে অপারেশন নির্ভর করে টিউমারের সাইজ এবং রোগীর সমস্যা কতটুকু তার উপরে। অনেক সময় কিছু ওষুধ রক্তপাত কমিয়ে দেয়, এমন কি টিউমারের সাইজ ছোট করে সাময়িকভাবে কষ্ট লাঘব করতে পারে। যারা বাচ্চা নিতে চান তাদের ক্ষেত্রে অপারেশন হলো মায়োমেকটমি, শুধু টিউমার অপসারণ করা হয়।
এডিনোমাইসিস /এন্ডোমেট্রিওসিস: ব্যথা এবং ব্লিডিং কমানোর জন্য অনেক ধরনের হরমোনের ওষুধ এবং পেইন কিলার দেওয়া হয়। যারা বাচ্চা নিতে চায় তাদের জন্য ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে সিস্ট অপসারণ, অ্যাডহিওলাইসিস করার মাধ্যমে প্রজননতন্ত্রের অ্যানাটমি ঠিক করা হয়। ইউটেরাইন প্রলাপ্স থাকলে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ, যেমন কিগেলস এক্সারসাইজ দেওয়া হয়। ভ্যাজাইনাল রিং, পেজারি এবং ফদারগিলস অপারেশন হিস্ট্রেকটমির বিকল্প হতে পারে।
কি কি উপায়ে অপারেশন: এবডোমিনাল অর্থাৎ পেট কেটে, ভ্যাজাইনাল, এবং ল্যাপরোস্কপিক হিস্ট্রেকটমি।
কোন অবস্থায় ওভারি ফেলা হয়: এটা নির্ভর করে রোগীর বয়স রোগের ধরন এবং ওভারির অবস্থার ওপরে। বয়স যদি মেনোপজের কাছাকাছি হয় তবে জরায়ুর সঙ্গে ওভারি এবং ফেলোপিয়ান টিউব ও ফেলে দেওয়া হয়, এতে করে পরবর্তীতে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর থাকে না।
ওভারি ফেলে দিলে কি সমস্যা হতে পারে: ওভারি মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। এখান থেকে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন আসে। ওভারি ফেলে দিলে এই হরমোনের অভাবে সার্জিক্যাল মেনোপজ শুরু হয়ে যাবে, অর্থাৎ রোগীর হাত পা জ্বালা করা, অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা, মুড সুইং, সহবাসের অনীহা, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য পরবর্তীতে অনেকের ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া লাগে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ডা. নুসরাত জাহান, অ্যাসোসিয়েট কন্সালটেন্ট (অবস-গাইনি), ইম্পেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম।
