শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কভিড-পরবর্তী স্বাস্থ্যের কিছু জটিলতা

ডা. আমিনুল ইসলাম

কভিড-পরবর্তী স্বাস্থ্যের কিছু জটিলতা

করোনা সংক্রমণ থেকে ভালো হয়ে যাওয়ার পর অথবা কভিড-পরবর্তী অনেক জটিলতা বা নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন কেউ কেউ। মাথার চুল পড়া থেকে শুরু করে যৌন অক্ষমতা- এমন কিছু নেই যেটা করোনা সংক্রমণ থেকে ভালো হয়ে যাওয়ার পরও কেউ ভুগতে পারে না। সুস্থ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে অনেকে ভুগে বলে Long COVID নামের নতুন এক পরিভাষার জন্ম হয়েছে। যন্ত্রণা পাওয়ার এই “long” সময়টুকু কার জন্য কতদিন/মাস/বছর সেটা স্পষ্ট করে বলার মতো কোনো পদ্ধতি এখনো বের হয়নি। সবার এমনটি হবে তা কিন্তু নয়। আর যার Long COVID হবে তার কোন সমস্যাগুলো হবে বা সেটা কেন হবে তাও অজানা। চিকিৎসকদের কাছে এ লক্ষণগুলো পরিচিত হয়ে উঠলেও অফিসের বসকে এই Long COVID এর Symptom গুলো বিশ্বাস করানো আসলেই কঠিন হবে। নিচে কভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও কী কী Symptom একজন মানুষকে স্বাস্থ্য নিয়ে কীভাবে ভোগাতে পারে তার বর্ণনা দেওয়া হলো-

স্নায়ুতন্ত্র : খিঁচুনি, শরীরে কাঁপুনি, দেহের অভ্যন্তরে ভাইব্রেশন সেন্স, হাতে-পায়ে ঝাঁকি মারা, রাতে রহস্যময় ভয়ানুভূতি, মস্তিষ্কে ধোঁয়াশা, বিভ্রান্তি বা কনফিউশন, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, হাত-পা আঙ্গুলে অবশতা, শক্তিহীনতা, অত্যধিক দুর্বলতা, জীবন্ত লাশের মতো অনুভূতি।

চর্ম : চুলকানি, খসখসে আঁশ লাল লাল ফুসকুড়ি, শুষ্কতা, লাবণ্য কমে যাওয়া, চামড়ায় গুটি বা দানা।

হার্ট : বুক ধড়ফড়, বুক বরাবর ছুরি মারার মতো গাই, হাঁপিয়ে ওঠা, প্রেসার কমে যাওয়া, প্রেসার বেড়ে যাওয়া, বসা থেকে দাঁড়ালে বা একটু হাঁটলে হার্টরেট অনেক বেড়ে যাওয়া।

অনুভূতি : ঘ্রাণহীনতা বা অন্যরকম ঘ্রাণ পাওয়া-ভুতুড়ে ঘ্রাণ, স্বাদহীনতা, হাত-পা জ্বালাপোড়া, রাতে অদ্ভুত শব্দ শোনা, চোখে আলোর ঝলকানি, কানে ঝিনঝিন বা ভো ভো করা, জ্বর ছাড়াই জ্বর জ্বর অনুভূতি, জ্বর আসা যাওয়া, যৌনানুভূতিতে সমস্যা, কানে কম শোনা, অনিয়মিত স্রাব-মাসিক বন্ধ থাকা।

ফুসফুস : শ্বাসকষ্ট-কাশি (শুতে গেলে বেড়ে যাওয়া, বুকে চাপ চাপ লাগা, অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে যাওয়া, কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা, ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অক্সিজেন কমে যাওয়া, অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীলতা।

মানসিক : বিষণ্নতা-দুশ্চিন্তা-হতাশা, বিচ্ছিন্নতাবোধ-একাকীত্ব বোধ, কষ্টগুলো অনেকে বিশ্বাস করছে না এ নিয়ে দুঃখবোধ, অস্তিত্বহীন কিছু দেখা বা শোনা।

ঘুম : অনিদ্রা, অযথা ঘুম ভেঙে যাওয়া, বসে ঘুমানো প্রবণতা।

পেট : ডায়রিয়া, ঢেঁকুর, পেট ফাঁপা ভাব, খাদ্যনালিতে খাদ্য আটকে যাচ্ছে এরকম অনুভূতি, মলের রং পরিবর্তন-মলত্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, প্রস্রাবের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, পেটে কামড় বা মোচড়-ক্ষুধা মন্দা।

মাথা, ঘাড় ও মুখ : চুল পড়া-চোঁয়ালে ব্যথা, সাইনাসের সমস্যা-গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, লালা গ্রন্থি (Parotid gland) ফুলে যাওয়া, সাময়িক মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, কথা বলায় জড়তা-মুখে ঝিনঝিন

শিনশিন, মাড়িতে ব্যথা।

চোখ : চোখে ঘোলা দেখা, চোখের সামনে কিছু ভাসতে দেখা, স্ক্রিন বা আলোতে ঝাপসা দেখা-হঠাৎ হঠাৎ কুয়াশাচ্ছন্ন দৃষ্টি।

ব্যথা : মাংসে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা-পেশিতে cramp-গলা ব্যথা, মাথাব্যথা।

হরমোন : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেওয়া-পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়া।  তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের আরও  সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর