মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস : মধ্যরাতের ঘাতক

ডা. আমিনুল ইসলাম

করোনাভাইরাস : মধ্যরাতের ঘাতক

করোনার শুরুর দিকেই দেশের বাইরের এক হাসপাতালে ডাক্তাররা হতভম্ব হয়ে দেখলেন রোগীদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে রাতের বেলায়, বিশেষ করে মধ্য রাত থেকে শেষ রাতের মধ্যে। এতে তারা ট্রিটমেন্ট প্রটোকলে পরিবর্তন এনে দিনের চেয়ে রাতের বেলা ঘন ঘন অক্সিজেনের মাত্রা মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিয়ে।

আমরা যখন সাপ দেখি তখন বিস্ফোরিত নেত্রে চোখ দুটি বড় করে দৌড় দেই, আমাদের হার্টরেট, শ্বাসপ্রশ্বাস তখন হুট করে বেড়ে যায়। আবার যখন কোনো মধুর সংগীত শুনি তখন চোখ দুটি যেন এমনিতেই বুজে আসে, হৃদ ও শ্বাসের গতি থাকে কমতির দিকে। এ স্বাভাবিক শরীর বৃত্তের কোনোটাই কিন্তু আমরা ইচ্ছা করে করি না। পরিস্থিতিভেদে আমাদের autonomic  nervous system, এটা আমাদের অজান্তেই শরীরকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এ autonomic ব্যাপারটাই ঘটে ঘুমন্ত কভিড রোগীদের বেলায়। কেউ যখন ঘুমায় উদাহরণস্বরূপ তখন কারও স্বাভাবিক হার্টবিট যদি থাকে ৮০ সেটা নেমে আসতে পারে ৬৫তে, স্বাভাবিক শ্বাস রেট ২০ থেকে নেমে আসতে পারে ১৫তে। যদি কারও অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমও করোনায় আক্রান্ত হয় তবে এ কমা না কমাটা হতে পারে অস্বাভাবিক। ধরে নেই রোগীর অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম ঠিক আছে এবং স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার হার্টরেট ও শ্বাসরেট কমেছে। যে রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা অলরেডি কম শ্বাসের গতি কমার কারণে তার হাইপোক্সিয়া আরও বেড়ে যায়। যখন অক্সিজেন কমে যায় তখন দেহের chemical তথা chemoreceptor উদ্দীপিত হয়ে শ্বাসের গতি বাড়ানোর জন্য ব্রেইনে সিগন্যাল পাঠায়। এভাবে দেহ অক্সিজেন আবার আগের অবস্থায় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুমের যে কোনো অবস্থাতেই এ প্রতিক্রিয়া তথা অক্সিজেন কমে যাওয়ার প্রতি রেসপন্সটুকু হয় দুর্বল। এজন্য কভিড রোগীদের ঘুমের মধ্যে অক্সিজেন কমে যাওয়ার যেমন ঝুঁকি থাকে তেমনি কমে গেলে সেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আবার বাড়ার উপায় থাকে না। তাই রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অক্সিজেন কমে মৃত্যুর সম্ভাবনা দিনের চেয়ে বেশি আশঙ্কা থাকে। কভিড রোগীদের দিনের চেয়ে রাতের বেলা ঘন ঘন অক্সিজেন চেক করার নির্দেশাবলিও আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। আর ঘুমন্ত রোগীর হাইপোক্সিয়া পাওয়া গেলে সর্বপ্রথম তাকে জাগিয়ে দিয়ে তারপর অক্সিজেনসহ অন্য ব্যবস্থাপনার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা। উদাহরণস্বরূপ, রাজস্থান সরকার বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে নির্দেশাবলি দিয়েছে ঘুমন্ত কভিড রোগীর অক্সিজেন কমে গেলে তাকে যাতে জাগিয়ে দেওয়া হয়, তাদের যাতে রাতের বেলা দিনের চেয়ে frequently সেচুরেশন দেখা হয়। একই উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি বা ভর্তিযোগ্য কভিড রোগীদের যেন ভরপেট খাবার, কথাবার্তায় যোগ দেওয়া, টয়লেটে হেঁটে যাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। কেননা এ সামান্য পরিশ্রমেই বিশেষ করে রাতের বেলা তাদের হাইপোক্সিয়া হতে পারে। কভিড রোগীদের শ্বসন পদ্ধতি, অটোনমিক নার্ভাস ফাংশন স্বাভাবিকের মতো নয় তাই অক্সিজেন কম বা হুটহাট কমে যায় এমন কভিড রোগীদের lung attack কে heart attack-এর রোগীদের অনুরূপ exertion ও stress  মুক্ত রাখতে হবে।

 লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর