বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ১৮ বছরের তরুণ থেকে ৭০ বছরের বয়স্ক মানুষের ফ্যাটি লিভার ডিজিজের রিপোর্ট পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে ফ্যাটি লিভার একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে এ রোগের হার ২৫% অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে ১ জন আক্রান্ত। অন্যতম কারণ হলো- অ্যালকোহল ও নন-আলকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস ।
অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ
মদ্যপান পশ্চিমা দেশে অন্যতম কারণ। মদ্যপান থেকে ৯০% ফ্যাটি লিভার বিকশিত হয়। এবং ২৫% অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং ১৫% লিভার সিরোসিস তৈরি করে। যারা মদ্যপান ছেড়ে দেন তাদের অনেকের ঝুঁঁকি কমে যায়।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ
যাদের মদ্যপানের ইতিহাস থাকে না এবং ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তারা এ গ্রুপে পড়েন। যখন লিভারের ৫ থেকে ১০ পার্সেন্টের বেশি চর্বি জমা হয় তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। চাহিদার অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব, জিনগত প্রবণতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণে এ রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।
ঝুঁঁকিতে কারা : মেটাবলিক সিনড্রোমে যারা ভোগেন
১) পেটের সামনের এলাকার স্ফীত স্থূলতা
২ ) উচ্চ রক্তচাপ ৩) ডায়াবেটিস ও প্রি ডায়াবেটিস
৪) কোলেস্টেরলের অসুবিধা-এলডিএল বেশি এইচডিএল কম ও ট্রাই গ্লিসারাইড বেশি।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের প্রায় ১০-১৫% নন অ্যালকোহলিক স্ট্যোয়াটো হেপাটাইটিস (NASH)-এ রূপান্তরিত হয়। লিভার কোষগুলো স্ফীত হয়- প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও ধ্বংস হয়-পরিবর্তে লিভারে শক্ত টিস্যু জমা হয় (ফাইব্রোসিস)। পুরো লিভার ফাইব্রোসিস হলে সেটাকে সিরোসিস বলে।
ন্যাশ এর লক্ষণ : ১) কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। ২) পেটের ডানদিকে উপরের অংশে অস্বস্তি ভাব ৩) ক্লান্তি ৪) দুর্বলতা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : ১) আলট্রাসনোগ্রাম করলে বেশিরভাগ মানুষের এ রোগ নির্ণয় করা যায়। লিভারে ৫-১০ % ফ্যাট জমা হলে গ্রেড ১.১০-২৫% জমা হলে গ্রেড ২ ও ৩০% এর বেশি জমা হলে -গ্রেড ৩ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২) লিভার ফাংশন টেস্ট (এএসটি ও এএলটি) ৩) ফাইব্রোস্ক্যান-এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা। বিশেষ প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি করার দরকার হয়।
বর্তমান পৃথিবীতে ও বাংলাদেশে নন অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস (NASH) -সিরোসিস ও ক্যান্সারের লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কী
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১) শরীরের ওজন কমানো (কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ) প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায়। ২) প্রতিদিন ব্যায়াম করা- অন্তত ৩০ মিনিট, দৈনিক একটু জোরে হাঁটা কার্যকর একটি ব্যায়াম ওজন কমানোর জন্য।
৩) এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড সহনীয় পর্যায়ে রাখা। ৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ৫) অ্যালকোহল পরিহার করা ৬) ধূমপান পরিহার করুন।
কী খাবেন : ১) শর্করাজাতীয় খাবার যেমন- ভাত, পাউরুটি, আলু ইত্যাদি পরিমাণে কিছুটা কম খেতে হবে। ২) শাকসবজি, তাজা ফলমূল স্বাভাবিক পরিমাণে খেতে পারবেন। ৩) পর্যাপ্ত মাছ (তৈলাক্ত অংশ ছাড়া) খেতে পারবেন। সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ মাছ এবং অন্যান্য মাছ পরিমিত সেবন করুন। ৪) জটিল শর্করা ওটস মিল জবের আটা খাবেন।
কী কম খাবেন : ১) চিনি ২) ভাঁজাপোড়া, চিকেন ফ্রাই, যে কোনো ফাস্ট ফুড কম খাবেন
৩) লবণ ৪) লাল মাংস-গরু, খাসি ইত্যাদি
৫) কোমলপানীয়, আইসক্রিম, পেস্ট্রি।
-অধ্যাপক ডা. এ কে এম মূসা
মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।