চাকরির সুবাদে বাবা দেশের বাইরে যেতেন। আসার সময় সে দেশের মুদ্রা নিয়ে আসতেন। এই মুদ্রা দেখেই তা সংগ্রহের আগ্রহ জাগে সাজিদের। এখন তার সংগ্রহে আছে ১৮০টি দেশের ব্যাংক নোট, ধাতব মুদ্রা। সংখ্যায় যা কয়েক হাজার। তিনি প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো, দিল্লি সালতানাতের মুদ্রা, বেঙ্গল সুলতানি আমলের মুদ্রা, গুজরাট সুলতানি আমলের মুদ্রা, ওসমানী খেলাফতের সময়ের একাধিক সুলতানের মুদ্রা, টিপু সুলতানের স্বর্ণমুদ্রা, আব্বাসি খেলাফতের হারুন আল রশিদের রৌপ্য মুদ্রা, খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৫-এর দিকের মৌর্য আমলের মুদ্রা এবং তাদের পরবর্তী মাগাধা আমলের রৌপ্য মুদ্রা, রোমান শাসক দ্বিতীয় কনস্টানটিয়াসের মুদ্রা, ফিলিস্তিনের মুদ্রা ইত্যাদি। ডাকটিকিট আছে ১২০টি দেশের এক হাজারেরও বেশি। সৌখিন এই সংগ্রাহকের পুরো নাম ওয়াসিম ইকবাল সাজিদ। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাজিদ।
পকেট খরচের টাকা, ঈদ সালামির টাকা জমিয়ে তা দিয়ে মুদ্রা কিনেন তিনি। টিউশনির টাকাও এই তালিকায় বাদ যায়নি। মুদ্রা জমানো ব্যয়বহুল শখ। তাই সাজিদকে টাকা জমানোর জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। জমানো সেসব টাকা দিয়ে মুদ্রা ক্রয় করেন। বাংলাদেশে অনেক তরুণ মুদ্রা সংগ্রাহক থাকলেও তাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন তিনি। শুধু মুদ্রা সংগ্রহে সীমাবদ্ধ নন, সংগ্রহের পরিধিও বিস্তৃত। পুরাতন পত্রিকা, ঐতিহাসিক দলিল, নথিপত্র ও ডাকটিকিট সংগ্রহেও রয়েছে তার গভীর আগ্রহ ও নিষ্ঠা। সাজিদের সংগ্রহে রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৫০টিরও বেশি পত্রিকা, যা দেশের ইতিহাসের এক অনন্য প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন সময়ের পত্রিকাও তার সংগ্রহে বিশেষ স্থান পেয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ফারসি ভাষার দলিল, আদালতের কোর্ট স্ট্যাম্প, সরকারি নথি এবং বহু দুর্লভ ডাকটিকিট।
এসব সংগ্রহ শুধু ঐতিহাসিক গুরুত্বেই নয়, শিক্ষামূল্য ও গবেষণার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত মূল্যবান। সাজিদ ক্যালিগ্রাফি করেন। ছবি তোলায়ও বেশ দক্ষ তিনি। এসব কাজে তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০২০ সালের রবি ১০ মিনিট স্কুলের কোয়ারান্টাইন ব্লগের জয়, বাংলাদেশের প্রথম আয়োজিত ই-এওয়ারনেস অলিম্পিয়াডের জয়, সাইবার চ্যাম্প ২০২০, ২০২৩ সালে লেখিকা সেলিনা হোসেনের জন্মদিন চিত্রশিল্পী সম্মাননা স্মারক লাভ ইত্যাদি। জাতিসংঘের বিভিন্ন ইভেন্টের ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বাইরের অসংখ্য ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন সাজিদ। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সংগ্রহের একটা প্রদর্শনীও হয়েছে। যার আয়োজন করে লিও ক্লাব অব গ্রিন ইউনিভার্সিটি। ভবিষ্যতে নিজের একটি ছোট সংগ্রহশালা বা জাদুঘর গড়ে তোলার স্বপ্ন লালন করেন সাজিদ। তার বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আজকের ব্যবহৃত নোট, মুদ্রা কিংবা কাগজপত্র একসময় হারিয়ে যাবে। কিন্তু এসব বস্তু শুধু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম নয়, এরা একটি জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সময়ের সাক্ষ্য বহন করে।
এই মূল্যবোধ থেকেই সাজিদের আকাঙ্খা, তার সংগ্রহকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার। তিনি চান, আজকের তরুণরা যেন হাতের স্পর্শে ইতিহাসকে অনুভব করতে পারে, দেখতে পারে অতীতের গৌরব, সংগ্রাম ও বিবর্তনের চিহ্নগুলো। সম্প্রতি সাজিদ জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ফেলোশিপ অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ফেলোশিপ হলো, একটি চার মাসব্যাপী (আগস্ট-ডিসেম্বর) গ্লোবাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম, যা জাতিসংঘের শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক উদ্যোগ United Nations Academic Impact (UNAI) এবং তরুণ নেতাদের নেটওয়ার্ক Millennium Campus Network (MCN) যৌথভাবে পরিচালনা করে। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যের হলেও অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। এ বছর বিশ্বের ৭ হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠানের ৬০ হাজারের বেশি আবেদনকারীর মধ্য থেকে মাত্র ২৯০টি ক্যাম্পাসের প্রায় ৪% শিক্ষার্থী এ সুযোগ পেয়েছেন।