গাঙ্গেয় বদ্বীপ বা আজকের বাংলাদেশে মানবসভ্যতা কখন গড়ে ওঠে তা ঠিক ঠিক বলার উপায় নেই। তারপরও বলা যায়, বাঙালি এক প্রাচীন জাতি। আর্যরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশে হানা দেয়, তখন তাদের হাতে পতন হয় একের পর এক জনপদের। সুসভ্য সিন্ধু উপত্যকার মানুষ যাযাবর যুদ্ধবাজ আর্যদের সঙ্গে শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। শুধু ভারতবর্ষ নয়, শ্রীলঙ্কায়ও আগ্রাসন চালায় তারা। আর্যরা বাংলাদেশ জয়ের জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। প্রতিবারই তারা পরাজিত হয় গাঙ্গেয় বদ্বীপের বীর জাতির কাছে। যে কারণে আর্যদের ধর্মগ্রন্থ বেদে ‘বাঙালি’ সম্পর্কে রয়েছে নানা ধরনের অবজ্ঞাপ্রসূত উক্তি। ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থে মন্তব্য করা হয়েছে -‘বয়াংসি বঙ্গাবগধাশ্চের পাদা’ অর্থাৎ বাঙালিরা পক্ষীবিশেষ। বাঙালিরা যে আর্য সংস্কৃতির বাইরে তা এ মন্তব্যের দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। মহাভারতে এ দেশের মানুষকে ম্লেচ্ছ বলে প্রচ্ছন্নভাবে গালি দেওয়া হয়েছে। আর্যদের জন্য গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা পাখির মতো কিচিরমিচির ভাষায় কথা বলে। তারা মাছ খায়। ওখানে গেলে জাত যায় ইত্যাদি।
বাঙালিদের সম্পর্কে আর্য ধর্মবেত্তাদের এত বিদ্বেষ কেন? কারণ একটাই। বাঙালিরা আর্য আগ্রাসকদের কাছে নিজেদের গর্বিত মাথা নত করতে চায়নি। তাদের বারবার উচিত শিক্ষা দিয়েছে। বাংলাদেশ জয়ের সাধ মিটিয়ে দিয়েছে আঘাতের বদলে প্রতিঘাত হেনে। সেই প্রাচীনকালেও যে বাঙালিরা বীর জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল, বাঙালি যুবরাজ বিজয় সিংহের সিংহল জয় তারই প্রমাণ বহন করে। কবির ভাষায়, ‘আমাদের ছেলে বিজয় সিংহ লঙ্কা করিল জয়।’ বিজয় সিংহের নামেই লঙ্কার নাম হয় সিংহল। সিংহলের নাম সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কা করা হলেও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জাতিগত পরিচয় আজও সিংহলী।
আবহাওয়াগত কারণে বাংলাদেশে প্রাচীন স্মারকচিহ্ন তেমন নেই বললেই চলে। যে কারণে ইতিহাসের অনেক মূল্যবান উপাদান কালের প্রহরে হারিয়ে গেছে। বাঙালির বীরত্ব সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত আমরা পাই, তার প্রায় সবকটিই এসেছে বিদেশি সংগ্রহশালা থেকে। শুধু বীরত্ব নয়, সেই প্রাচীন যুগেও বাঙালিরা তাদের মেধা দিয়ে বিশ্বকে আলোকিত করেছে। বাঙালি পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর চীনে গিয়েও তার জ্ঞান বিলিয়েছেন।
মধ্যযুগের দিকে তাকালেও আমরা দেখব, বাঙালিরা বীরেরই জাতি। এ দেশের মানুষ মুঘল, পাঠান কোনো বিদেশি আধিপত্যকে মেনে নেয়নি। বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে তারা বারবার বিদ্রোহী হয়েছে। জীবন দিয়ে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়েছে।
আগেই বলেছি, আর্যরা বারবার পরাজিত হয়েছে বাঙালির কাছে। ভিনদেশি আর্যদের সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ। যা বাঙালিদের প্রতি তাদের বিদ্বেষের কারণ হয়েও দাঁড়ায়। আর্যদের ধর্মীয় কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পতাকা তোলেন ভগবান বুদ্ধ। তিনি শান্তি ও অহিংসার বাণী প্রচার করেন। গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার মানুষ দলে দলে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায় দীক্ষিত হয়। প্রাচীন বাংলা বৌদ্ধধর্মের বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়।
গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণকে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভালো চোখে দেখেনি। তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে এদেশের মানুষকে কীভাবে জব্দ করা যায়। কর্ণাটকের ব্রাহ্মণ্যবাদী সেনদের নেতৃত্বে সেই মধ্যযুগে চলে আগ্রাসন। সেনরা বাংলাদেশের একের পর এক জনপদ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। চালায় গণহত্যা। জোর করে চলে ধর্মান্তর। বৌদ্ধধর্মকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনের অপচেষ্টায় মেতে ওঠে তারা।
গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার মানুষ আধিপত্যবাদীদের এ নৃশংসতাকে কোনো দিন ক্ষমা করেনি। পরবর্তীতে সুফি-সাধকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হলে দলে দলে বাঙালিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যা ছিল বর্ণবাদ ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিবাদের প্রতিফলন। বাংলা ও বাঙালি নামটিও মূলত মুসলিম শাসনামলের উপাদান।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, উপমহাদেশে বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা অন্য যে কোনো জাতির চেয়ে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছে। মুঘল আমলে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে দিল্লি বাহিনীকে। ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ, কেদার রায়, প্রতাপাদিত্যসহ বাংলার বার ভূঁঁইয়ারা নিজেদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখতে প্রাণপণ লড়েছেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে ভিনদেশি উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সূর্য অস্ত যায়। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের যে কোনো জাতির চেয়ে বাঙালিরা বেশি রক্তক্ষয় করেছে। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিরা ছিল নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যেসব সংগঠন নেতৃত্ব দিয়েছে তার প্রায় সবকটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। মুসলিম লীগ, কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পেছনে বাঙালি নেতাদের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। এর আগে তিতুমীর ও ফকির মজনু শাহ ও ফরায়েজী বিদ্রোহের ইতিহাসও স্মরণযোগ্য।
১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তান ও ভারত। আজকের বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের পূর্বাংশ। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ অধিবাসী ছিল বাঙালি। কিন্তু দেশ শাসনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না বললেই বলে। সেনাবাহিনীতে বাঙালি সৈন্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ ভাগ। ব্রিটিশরা বাঙালিদের সেনাবাহিনীতে নিতে চাইত না তাদের আনুগত্য সম্পর্কে সন্দেহের কারণে। স্মরণযোগ্য যে, সম্রাট বাহাদুর শাহর নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়, তাতে বাঙালি সৈন্যরা অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। ইংরেজদের ভাষায় তথাকথিত এ ‘সিপাহি বিদ্রোহে’ জড়িত থাকার সন্দেহে শত শত বাঙালি সৈন্যকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম দমনে ইংরেজদের পাশাপাশি পাঞ্জাবি সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাঙালিরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সেনাবাহিনীতে তাদের রিক্রুট করা হতো না অজুহাত দেখিয়ে। বলা হতো- বাঙালি ভীরু জাতি। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পাড়ের মানুষ যে ভীরু নয় মহান মুক্তিযুদ্ধে তা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ভাষা আন্দোলনেও প্রমাণিত হয়েছে এদেশের মানুষ অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। দুনিয়ার ইতিহাসে বাঙালিরা প্রথম জাতি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছে। সালাম, রফিক, বরকতসহ নাম জানা-অজানা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি শাসনামলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাঙালির এ ভাষাপ্রেম আজ বিশ্বজুড়ে নন্দিত। জাতিসংঘ ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ২১ ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দেশে দেশে এ দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার সুরক্ষায় ২১ ফেব্র“য়ারি এখন সারা দুনিয়ায় পরিচিত নাম।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাঙালিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। ১৯৪৬ সালে যে নির্বাচন হয় তাতে কেবল বাঙালিরাই নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়। পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লীগ সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও পাকিস্তানের পাঞ্জাবি সামরিক ও আমলাচক্রের ষড়যন্ত্রে তৎকালীন বাংলাদেশ কার্যত উপনিবেশে পরিণত হয়। নির্মম শোষণের শিকার হয় এদেশের মানুষ। এ শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলাদেশের সাহসী মানুষ। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্ব গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে জোট বেঁধে শুরু হয় প্রতিবাদ। গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে দানা বেঁধে ওঠে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের ৯টি বাদে সবকটিতে জয়ী হয়।
১৯৫৬ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী স্বাধিকারের প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নেন। জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের মানুষকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করলে তারা পশ্চিম পাকিস্তানকে আসসালামু আলাইকুম জানাতে বাধ্য হবেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন বাঙালির মুক্তিস্পৃহাকে আরও সচকিত করে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় ছয় দফা আন্দোলন। যার মূল কথা ছিল- বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার। শেখ মুজিবের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আনা হয়। গ্রেপ্তার করা এ সাহসী নেতাকে। ১৯৬৯ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তি পান শেখ মুজিব। এ অভ্যুত্থানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী।
১৯৭০ সালে এ দেশের মানুষ ছয় দফার পক্ষে ম্যান্ডেট দেয়। মাত্র দুটি আসন বাদে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সবকটিতে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঙালিদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে প্রমাদ গুনে পাকিস্তানিরা। তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্থগিত করা হয়। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে বাঙালিরা। এ পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের মানুষের ওপর। শুরু হয় গণহত্যা। এ প্রেক্ষাপটেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের বীরত্বের ইতিহাস। সর্বাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একরকম খালি হাতেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশের মানুষ। পাকিস্তানিদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া অস্ত্রই ছিল তাদের হাতিয়ার। তাদের রসদই ছিল মুক্তিবাহিনীর রসদ। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী যে অসামান্য বীরত্ব ও দেশপ্রেমের পরিচয় দেয় তা ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। দেশ মুক্তির এ যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়। ইজ্জত হারায় হাজার হাজার মা-বোন। বাংলাদেশের এমন কোনো প্রান্তর নেই যেখানে স্বজন হারানোর কান্না নেই। পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করতে পরিকল্পিত গণহত্যার আশ্রয় নেয়। এ দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশাও প্রণয়ন করে তারা। হাজার হাজার ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে জিঘাংসায় মেতে ওঠে দখলদার বাহিনী। তারপরও বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিযুদ্ধকে তারা প্রতিহত করতে পারেনি। যে জাতির ভয়ে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার এ উপমহাদেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, যে জাতির কাছে পদানত হয়েছিল সিংহলের মতো দূরবর্তী দেশ, যে জাতির কাছে সেই বৈদিক যুগে বারবার পরাজিত হয়েছে আর্য আগ্রাসকরা সেই বাঙালির কাছেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তিসেনাদের অসীম সাহসিকতার ইতিহাস। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কখনো স্বীকার না করলেও তাদেরই এক সেনা কর্মকর্তা তার বইতে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দেশপ্রেমের চিত্র অঙ্কন করেছেন তা যে কোনো বিচারে অতুলনীয়।
ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক তার লেখা উইটনেস টু সারেন্ডার নামের বইতে লিখেছেন- রাজশাহীতে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানি সৈন্যরা আটক করে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় সহযোদ্ধাদের খবর। জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর পরও কিশোরটি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান দিতে রাজি হয়নি। ক্ষুব্ধ পাকিস্তানি কমান্ডার কিশোরটির বুকে রাইফেল ঠেকিয়ে বলেন, তুমি তোমার সহযোদ্ধাদের সন্ধান না দিলে গুলিতে ঝাঁঝরা করা হবে। মুহূর্তের জন্য থমকে যায় কিশোরটি। পাকিস্তানি কমান্ডারকে বলে আমাকে এক মিনিট সময় দিন। তারপর সে বসে পড়ে মাটিতে। সেখান থেকে কিশোর সেই মুক্তিযোদ্ধা এক মুঠো মাটি নিয়ে তার বুক ও মাথায় ঠেকায়। তারপর পাকিস্তানি কমান্ডারকে বলে, ‘আমি প্রস্তুত। নির্দ্বিধায় আমাকে গুলি করতে পারেন।’
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এমন যোদ্ধার সংখ্যা ছিল অসংখ্য। যারা ছিলেন প্রমিথিউসের মতো দেশের মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করতেই তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জয় ছিল দেশপ্রেমের জয়।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন