ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার কারণে ২৮ জাতির এ জোট ভেঙে যেতে পারে। এমনটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার কারণে সামগ্রিকভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব হবে। ইরানের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক রিগ্যান প্রশাসনের সহকারী অর্থমন্ত্রী ও বিশিষ্ট গ্রন্থকার এবং মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক পল ক্রেইগ রবার্টস। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এসোসিয়েট এডিটর ক্রেইগ রবার্টস এ সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে পুরো বিশ্বের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
৪৩ বছর পর গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার একদিন পর গতকাল শুক্রবার মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ সম্পর্কে তীর্যক মন্তব্য করলেন।
তিনি বলেন, 'আশা করা যায় বেক্সিটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটও ভেঙে যেতে পারে। বড় দেশ হিসেবে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে। ফলে গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন ও ইতালির মতো যেসব ছোট দেশ নির্মম শোষণের শিকার তারা জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভোট দিতে পারে।'
পল ক্রেইগ বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে একটি স্বৈরতন্ত্র; সেখানে কোনো গণতন্ত্র নেই। তাদের একটি সংসদ আছে কিন্তু তার কোনো ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা রয়েছে অনির্বাচিত কমিশনের হাতে যারা সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। ফলে ইউরোপের জনগণ থেকে সরকারগুলোকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।'
মার্কিন এ বিশ্লেষক পরিষ্কার করে বলেন, 'জনগণের জন্য ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। গ্রিসের মতো গরিব দেশকে জার্মানি ও হল্যান্ডের ব্যাংকগুলো লুট করেছে।' তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনয়ন থাকার কারণে ন্যাটো এত শক্তিশালী। ব্রেক্সিটের কারণে এখন ন্যাটোও ভেঙে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এই ন্যাটোকে ব্যবহার করে আফগানিস্তান, লিবিয়া ও ইরাক ধ্বংস করেছে। সিরিয়াকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব করতে সক্ষম হয়েছে একমাত্র ন্যাটোর কারণে।”
পল ক্রেইগ বলেন, “ন্যাটো যদি ভেঙে যায় তাহলে মার্কিন আগ্রাসন চালানোর দিন শেষ হয়ে আসবে এবং ওয়াশিংটন কোনোভাবেই ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দিতে পারবে না। এসব কারণে বলা যায়- ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গিয়ে ব্রিটেন মানব সভ্যতাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি থেকে আপাতত রক্ষা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়া, চীন ও ইরানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এখনই ওয়াশিংটন সে লক্ষ্য থেকে সরে আসবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো ভেঙে গেলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র হতাশ হয়ে পিছু হটবে। সে কারণে লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।'
পল ক্রেইগ বলেন, ব্রিটেন বেরিয়ে আসার কারণে এখন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অব জাপান ও জর্জ সরোস একযোগে ব্রিটিশ অর্থনীতি ও পাউন্ডের ওপর হামলা চালাতে পারে এবং এই অর্থ সন্ত্রাসের মাধ্যমে ব্রিটেনের জনগণকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে যে, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে কত বড় ভুল না করেছি। নতুন করে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিই।' সূত্র : পার্সটুডে'র
বিডি-প্রতিদিন/২৫ জুন ২০১৬/শরীফ