বর্তমানে মাঝারি মানের একটি স্মার্টফোন কিনতে গেলে আপনাকে খরচ করতে হবে ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। অথচ, এরচেয়ে ঢের কম দামে মিলে যাবে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র কালাশনিকভ! অবাক হচ্ছেন? অবিশ্বাস্য হলেও উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে রয়েছে এমনই এক অস্ত্রের কালোবাজার। যেটাকে জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যও বলা যায়।
পেশোয়ার থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ে ঘেরা দারা আদমখেল। গত কয়েকদশক ধরে জঙ্গিদের কার্যকলাপ, সক্রিয়তা এখানকার রোজনামচা। চোরবাজার বলতে যা বোঝায়, এই শহর তার থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল ডিগ্রি থেকে শুরু করে মানবপাচার, মাদক, চোরাই বিদেশি গাড়ি— এমন কিছু নেই যা এখানে মিলবে না।
১৯৮০-র দশকের একেবারে গোড়া থেকে এই চোরাকারবারের বাড়বাড়ন্ত। সেই সময়েই এই বাজারে ঢোকে আগ্নেয়াস্ত্র। তখন সীমান্ত ছিল নামে মাত্র। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়তে মুজাহিদিনরা সীমান্ত পেরিয়ে এই বাজারে চলে আসত আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে। ক্রমশ আগ্নেয়াস্ত্রই হয়ে ওঠে এখানকার প্রধান পণ্য। একসময়ে গোটা শহরে দখল নেয় পাকিস্তান তালিবান। ২০০৯ সালে এখানে তারা শিরশ্ছেদ করে পোল্যান্ডের ইঞ্জিনিয়ার পিত্র স্ট্যানকজাকের। সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। সেই সময় থেকেই দারা আদমখেলে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে থাকে তালিবান। একদিকে পাকিস্তান সরকার, অন্যদিকে তালিবান।
একসময়ে তালিবান শাসনেও ইতি পড়ে। অনেক কিছু বদলেছে। কিন্তু বদলায়নি একটি জিনিস। এখনো এখানকার দোকানে দোকানে খেলনার মতো ঝুলছে মারাত্মক সব আগ্নেয়াস্ত্র। কালাশনিকভ এই সব দোকানে মাছ-ভাত!
কেমন দাম এখানে আগ্নেয়াস্ত্রের? এমপি ৫ নামক ঘাতক মারণাস্ত্রটি বাইরে কিনতে গেলে দাম হাজার ডলারের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে অনায়াসে। কিন্তু দারা আদমখেলে সেই বন্দুকই পাওয়া যায় বাংলাদেশি মুদ্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকায়। সঙ্গে থাকে এক বছরের গ্যারান্টিও। নয় হাজার টাকা খরচ করতে পারলেই মিলে যাবে কালাশনিকভ। বলা বাহুল্য, এখানকার কালাশনিকভের সঙ্গে আসল কালাশনিকভের কোনও পার্থক্য খুঁজে বের করা কঠিন। শুধু তা-ই নয়, এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের বিক্রি করা কোন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এ যাবৎ কোন অভিযোগ আসেনি।
এখানকার অস্ত্র বাজারটি একেবারে শহরের মাঝবরাবর গিয়েছে। রাস্তার দু'পাশে ছোট-বড় দোকান। সব দোকানেই ঝুলছে আগ্নেয়াস্ত্র। আফগানিস্তান সীমান্ত-লাগোয়া এই অঞ্চলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কোনও দিনই সেভাবে ছিল না। উল্টো দাপিয়ে বেড়িয়েছে জঙ্গিরা। ফলে বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসাই এই এলাকার উপজাতিদের কাছে হয়ে উঠেছে প্রধান জীবিকা। নিজেরাই তৈরি করছেন নানা ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র।
তবে তালিবানের মেরুদণ্ডের জোর কমার পর সম্প্রতি এখানকার পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার চেষ্টা করছে। বেশি কিছু অস্ত্রের দোকানে তালাও ঝুলিয়েছে নওয়াজ শরিফ সরকার। তাই আগে রাস্তার দু'ধারে যেভাবে লাগাতার অস্ত্রের পসরা দেখা যেত, এখন তারই ফাঁকফোকরে মুদিখানা বা ইলেকট্রনিক্সের দোকান দেখা যায়। সূত্র: এবেলা।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ