ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশি দেশটির ওপর পাল্টা আঘাত হানার বিষয়ে গোটা ভারত থেকে আওয়াজ উঠেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে হামলার বদলে কূটনৈতিক ভাবেই পাকিস্তানকে একঘরে করার পরিকল্পনা নিয়েছিল মোদির ভারত।
উরির হামলার পর পাকিস্তানকে কিভাবে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করা হয় সে বিষয়েই বেশি নজর দিয়েছিলেন দিল্লির শীর্ষ কর্মকর্তারা। সেই কূটনৈতিক লড়াইয়ে একধাপ এগোল ভারত। ইতিমধ্যেই হামলার নিন্দা করে নিহত সেনাদের প্রতি শোক জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। নিন্দাও জানিয়েছে সেই সাথে। হামলায় তীব্র নিন্দার ঝড় ভারত জুড়েও।
পাকিস্তানের তরফ থেকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও তাতে গখুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি নওয়াজ শরিফ। জাতিসংঘ কাশ্মীর ইস্যু তুললেও তা বিফলে গেছে। জাতিসংঘের ৭১ তম সাধারণ সভার অধিবেশনে মহাসচিব বান কি মুনের প্রারম্ভিক ভাষনে কাশ্মীর নিয়ে একটা শব্দও খরচ করেন নি। প্যালেস্তাইন, অনুপ্রবেশ, উদ্বাস্তু থেকে একাধিক বিষয় থাকলেও কাশ্মীরের বিষয়ে নীরব ছিলেন মহাসচিব।
বলা ভাল, কাশ্মীর নিয়ে সহানুভুতি আদায়ের বদলে উল্টে একঘরে হওয়ার দিকে এগিয়েছে পাকিস্তান। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ভারত। কারণ জাতিসঙ্ঘে পাকিস্তানের বিপক্ষে কূটনৈতিক কার্যকলাপে ভারতকে নেতৃত্বে দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার আগে বান কি মুনের ভাষনে কাশ্মীর প্রসঙ্গের উল্লেখ না থাকায় অ্যাডভানটেজ ভারত।
এর আগে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে উল্টে পাল্টা ধমক খান পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানকে জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল বলেও কড়া ভাষায় তোপ দাগেন কেরি। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সভায় যোগ দেওয়ার ফাঁকেই সোমবার কেরির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কেরি পরিস্কার জানিয়ে দেন সাম্প্রতিক কালে জঙ্গি দমনে পাকিস্তান কিছুটা উদ্যোগী হলেও এখনও সেদেশ সন্ত্রাসবাদীদের মুক্তাঞ্চল। এটা চলতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করতে মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে বিল পেশ করা হয়েছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আইনপ্রণেতা ওই বিল পেশ করেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি টেড পো এক বিবৃতি দিয়ে বলেন পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার শত্রুদের বিভিন্ন ভাবে মদদ দিচ্ছে। ক্রমাগত বিশ্বাসঘাতকা করে কার্যত সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান। এখন সময় এসেছে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার। সেই প্রেক্ষিতেই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করার সময়ে এসে গেছে। আগামী চার মাসের মধ্যে এই বিলের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে মার্কিন কংগ্রেসে। বিলটিকে সমর্থন জানিয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলই। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিলটি পেশ করা হয়। ‘পাকিস্তান স্টেট স্পনসর অফ টেররিজম ডেজিগনেশন অ্যাক্ট’ নামে এই বিলটি পেশ করেন টেড পো। বিলটিকে সমর্থন করেন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস ম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রে বালুচিস্তানের বিষয় নিয়ে সোচ্চার ডানা রোহারবাচ।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে একযোগে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছে ফ্রান্স ও রাশিয়াও। পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সেনা মহড়া’র কথা ছিল তা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ‘ধ্রস্নজবা-২০১৬’ নামে ওই মহড়া হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উরি হামলার প্রেক্ষিতেই তা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া। এটাও ভারতের কাছে একটা বড় কূটনৈতিক জয় বলেই মানছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
এই দু:সময়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশও ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো এক বার্তায় ‘বাংলাদেশ যে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানায়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়েছেন সরকার’। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের সঙ্কটময় মুহুর্তে পাশে থাকবে।
সব মিলিয়ে উরিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে পাকিস্তানের ওপর। প্রসঙ্গত গত রবিবার ভোরে উরিতে সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয় ১৭ জন পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরো ১ জনের। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এখনও বেশ কয়েকজন জওয়ান, তাদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর