ইরাকের মসুল শহর আইএস জঙ্গির হার থেকে রক্ষার জন্য পণ করেই মাঠে নেমেছে ইরাকি সৈন্যরা। সেনাদের একটি বিশেষ দল রয়েছে, যাদের বলা হচ্ছে 'গোল্ডেন ডিভিশন'। আমেরিকায় গিয়ে তারা জঙ্গি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছে। দলের প্রত্যেকেই সু-প্রশিক্ষিত। বিনা যুদ্ধে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়ার বান্দা এ দলের সৈনিকরা নন। আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে চোখে চোখ রেখে লড়ার ব্রত নিয়েই তারা আদাজল খেয়ে নেমেছেন। এই বাহিনীর সকলেই ‘স্কাল মাস্ক’ পরিহিত। মানে মানুষের খুলির মতো দেখতে মুখোশ। এজন্যই বোধহয় একঝলক দেখলেই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়! হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। সতর্ক নজরদারি এবং শত্রুদের সঙ্গে নাছোড় লড়াইয়ের মানসিকতা- সবমিলিয়ে মসুল থেকে আইএস জঙ্গিদের সাম্প্রতিক উৎখাতের ব্যখ্যা এই দূর্জয় বাহিনীই।
নভেম্বরের প্রথম শনিবার। গোটা মসুল তখন ঝকঝকে রোদের আলোয় হাসছে। জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়ে ত্রস্ত থাকার অভ্যাস? সে তো বহুদিন আগেই গড়ে উঠেছে! সেই সকাল কিন্তু অন্য ছবিই দেখল। ইরাকি বাহিনীর পুরোভাগে থাকা এই গোল্ডেন ডিভিশনের খুলি মুখোশ পরা সেনারাই একের পর এক হানা দিলেন আইসিস জঙ্গিদের ডেরায়। উদ্দেশ্য, যতগুলো সম্ভব সন্ত্রাস ঘাঁটিকে ভেঙেচুরে গোটা এলাকাটার পূণর্দখল! মরিয়া লড়াইয়ে ছিনিয়ে নেওয়া গিয়েছিল মসুলের হাফ ডজন জেলার কর্তৃত্বের রাশ। শহরের রাস্তায় রাস্তায় চলল দু তরফের মধ্যে ভয়াল সংঘর্ষ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জঙ্গিদের কবলমুক্ত করতে অনেকটাই সফল হয়েছেন তারা। তবে পুরাটা নয়, ছয়টি জেলা।
বলা হচ্ছে, ইরাকি সৈন্যবাহিনীতে এই বিশেষ লড়াকু বাহিনী সবচেয়ে মহার্ঘ্য অলঙ্কার! মরু দেশের সেনাবাহিনীতে এই কম্যান্ডো ব্যাটেলিয়ন আমেরিকার আর্মি রেঞ্জাররা যে ধরনের ট্রেনিংপ্রাপ্ত হন সেই ধারাতেই প্রশিক্ষিত। জনশ্রুতি, আইএস জঙ্গিদের হাজার জনের একটা দলের চাইতেও গোল্ডেন ডিভিশনের একেকজন সৈন্য বেশি শক্তিধর! অল্পদিনেই শুধু সমগ্র ইরাক নয়, গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন সেনাবাহিনীর এই বিশেষ বিভাগ। এমনকি জানা গেছে ফেসবুকেও খুলি মুখোশ পরা সৈন্যদের ২০ লক্ষ ‘ফলোয়ার’ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এমন মুখোশপরা বাহিনীর দেখা আগেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০০৩ সালে কুয়েতে। তবে, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসবাদী হানার আগাত এড়ানোর জন্য নয়, এপ্রিল-মে মাসে মরুঝড়ের আঁচ এড়াতে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মসুল পুনর্দখলের দিনটিতে শহরের রাস্তায় জঙ্গি বাহিনীর মরিয়া লড়াই বেধেছিল ‘কাউন্টার টেররিজম সার্ভিস’ বা সি টি এস বাহিনীর সঙ্গে। ইরাকি সেনা ও পুলিশ তাদের সর্বতোভাবে সহায়তার কাজটিও করে গিয়েছিল নিরলসভাবে। মসুলের পূর্ব অংশে ও বারতাল্লায় ইরাকি সৈন্যের ঘাঁটিতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের নিয়ে এসে শুশ্রূষা করা হয়। তবে, এতকিছুর পরেও মানতেই হবে, ইরাকের মসুল শহরে আইসিস জঙ্গিদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পিছিয়ে না গিয়ে বেপরোয়া প্রত্যাঘাত হেনেছে ইরাকি সেনার খুলি মুখোশ পরা বিশেষ বাহিনী। মূলত তাদের সিংহ বিক্রমেই পুনরুদ্ধার করা গেছে মসুলের কর্তৃত্ব। গোটা ইরাকি জনমানসে সত্যিকারের নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন এখন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/২০ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব