দুর্নীতি ঠেকাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া ৫০০ ও এক হাজার রুপির নোট বাতিল করার সিদ্ধান্তের পর থেকেই খড়্গ নেমে এসেছে অনেকের ওপর। কোনো উপায় না থাকায়, অচল টাকার বিপুল কোষাগার না রাখতে পেরে এবং পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায় সঞ্চিত অর্থরাশি নষ্ট করে ফেলছে নিষিদ্ধ সিপিআইও (মাওবাদী)।
সংগঠনের ঝাড়খণ্ড রাজ্য কমিটি অন্তত ১০০০ কোটি টাকা মাটির তলায় পুঁতে দিয়েছে। সূত্র জানায়, মাটির তলায় বিশেষ বাঙ্কারে রেখে দেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের। তাদের সংগ্রহে থাকা আসল ও জাল টাকা যে চালানো সম্ভব নয় তা বুঝে ফেলেছে এই সংগঠনগুলো।
সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে মাওবাদীরা কিছু পরিমাণ টাকা গোপনে বাজারে চালাতে পেরেছে। সরকার রাশ শক্ত করতেই মাথায় হাত পড়েছে মাওবাদীদের। ফলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে, বিপুল পরিমাণ টাকা নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন নোটের ধাক্কায় নড়ে গেছে সিপিআই(মাওবাদী)- আর্থিক খুঁটি।
একদিকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিসগড়, ওডিসা ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ; অন্যদিকে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে ছড়িয়ে আছে দেশের মাওবাদী করিডর। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক লেনদেনের উপর বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিও সতর্ক রয়েছেন।
অবৈধ লেনদেন রুখতে মাওবাদী করিডরের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ড সরকারের কর্মকর্তারা জানান, অন্তত ৭০ কোটি অচল টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আরও বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হবে।
ঝাড়খণ্ডের গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, প্রতি বছর অন্তত ১৪০০ কোটি টাকা তোলা আদায় করে মাওবাদীরা। জঙ্গলের গভীর বাঙ্কারে রাখা থাকে এই টাকার বিরাট অংশ। টাকা বাতিলের ধাক্কায় মাওবাদীদের পক্ষে তেমন টাকা আর চালানো সম্ভব নয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর লেভি বাবদ ঝাড়খণ্ডেই সবথেকে বেশি অর্থ জমা করতে পারে মাওবাদীরা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ছত্তিসগড়। তারপরেই বিহার। সেই লেভির টাকা বাজারে আনার ক্ষেত্রে সবরকম বাধা তৈরি করা হবে। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল নকশাল নাশকতা সংক্রান্ত বিভাগের নির্দেশক আনন্দ জৈন।
তার নির্দেশে, মাওবাদী নাশকতায় রক্তাক্ত রাজ্যগুলোতে অভিযান চালাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আধাসামরিক সেনা ও গ্রেহাউন্ড বাহিনীকে। মাওবাদী করিডরের প্রতিটি এটিএম কাউন্টারে চলছে বিশেষ নজরদারি।
মাওবাদীরা গ্রামাঞ্চলে জনধন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে মরিয়া রয়েছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ।
বিডি প্রতিদিন/ ২১ নভেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম-৫