ইরানের বাসিন্দাদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি অ্যাপ্লিকেশন টেলিগ্রাম, যা দেশটির অন্তত চার কোটি মানুষ ব্যবহার করত।
কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ঘোষণা করে সম্প্রতি সেই অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। ফলে এই অ্যাপের ওপর নির্ভরশীল মানুষজনকে যেমন বিপদে ফেলেছে, তেমনি উদারপন্থীদের হতাশ করে তুলেছে।
টেলিগ্রাম অ্যাপটি ইরানিয়ানদের কাছে শুধু একটি বার্তা পাঠানোর অ্যাপ নয়। ইরানি প্রেসিডেন্টের মতো অনেকে এটি গণযোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেন, আবার অনেকের রুজিরোজগার এর ওপর নির্ভর করে।
টেলিগ্রামের হিসাবে, প্রায় চার কোটি ইরানিয়ান টেলিগ্রাম অ্যাপটি ব্যবহার করে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও।
টেলিগ্রামের ওপর যদিও এই নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করা হচ্ছিল, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অনেকে ইরানিয়ানকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
টেলিগ্রাম তার গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ দেয়, যার ফলে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেখানে নজরদারি করতে পারে না। যে কারণে ইরানে এই অ্যাপটির এতো জনপ্রিয়তা। আর এ কারণেই টেলিগ্রামের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা।
গত জানুয়ারিতে ইরানের অন্তত ৮০টি শহর জুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানেও যোগাযোগ, ছবি আর ভিডিও আদানপ্রদানে টেলিগ্রাম অ্যাপটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
গ্রাহকদের তথ্য দিয়ে টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠাতাদের সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছিল ইরানের কর্মকর্তারা, কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি। এরই জের ধরে আসল এই নিষেধাজ্ঞাটি।
ইরানের নিষিদ্ধ অ্যাপের তালিকায় আরো রয়েছে টুইটার, ফেসবুক আর ইউটিউবও। নেটওয়ার্কিং বিশেষজ্ঞ সিয়ামাইক আরাম বলছেন, এখন ইরানের বেশিরভাগ মানুষ শিখে নিয়েছে, কিভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা এড়াতে হয়।
তিনি বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে ইরানের মানুষজন অনেক ধরণের প্রক্সি ওয়েবসাইট আর সফটওয়্যার ব্যবহার শিখে নিয়েছে, যাতে তারা এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েই এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে জানুয়ারির বিক্ষোভের পর প্রক্সির ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জানে না, তারাও এখন শিখে গেছে, কিভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হয়।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এখন ইরানে এসব অ্যাপ বন্ধ করতে হলে পুরো ইন্টারনেটই বন্ধ করে দিতে হবে, যা বাস্তবসম্মত নয়।
জরুশ নামের ইরানি একটি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ, কিন্তু ইরানের মানুষজনের সেই অ্যাপে বিশ্বাস নেই।
টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও, যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শক্ত কোন ব্যবস্থা নেননি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/৯ মে, ২০১৮/ফারজানা