গত তিন সপ্তাহ ধরে জ্বালানি তেলের ওপর কর বাড়ানোর প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভের তোপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের আগামী বছরের বাজেটে জ্বালানি তেলের ওপর কর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপে বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন। এর একদিন আগেই অবশ্য তিনি বলেছিলেন, কর বৃদ্ধি বাতিল না, সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য পেছাতে পারবেন তিনি।
মঙ্গলবার ফিলিপে বলেছিলেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আরোপের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের জ্বালানি তেলের ওপর কর বা কার্বন ট্যাক্সের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি অধিকতর বিবেচনার জন্য ছয় মাস পেছানো হবে।
এছাড়াও চলতি শীতে গ্যাস এবং বিদ্যুতের যে দাম বাড়ার কথা ছিল সেটাও আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ফিলিপে ডানপন্থী বিরোধীদলীয় নেতা মেরিন লে পেনের সঙ্গে বুধবার এবং তার আগে অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মেয়ার বিক্ষোভের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে করেন।
এরপর রাষ্ট্রপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক শেষে ২০১৯ সালের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত নতুন করের অংশটি বাতিল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এর আগে সরকারের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সমঝোতা বৈঠক বাতিল হয়। এ অবস্থার মধ্যেই বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছিল ফ্রান্সের পুলিশ বাহিনী।
জ্বালানি কর ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে চলা ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্ট নামে এই আন্দোলন খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে জ্বালানি কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সর্বনিম্ন অবসর সুবিধা, কর ব্যবস্থার পরিবর্তন ও অবসরকালীন বয়সসীমা কমানোসহ অন্তত আরও ৪০টি দাবি তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা।
গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস এই আন্দোলনে এরই মধ্যে কোটি কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ আন্দোলনে রাজপথে চলমান সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মোট চারজনের মৃত্যু হয়। গত কয়েকদিনের বিক্ষোভ থেকে চার শতাধিক মানুষ আটক হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে ১৯৬৮ সালের পর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এতবড় অরাজকতার ঘটনা আর ঘটেনি। চলমান এই বিক্ষোভে গোটা দেশে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
আন্দোলনের শুরু থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দেশের বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য জ্বালানি তেলের ওপর কর বাড়ানোটা খুবই জরুরি দাবি করে তাঁর সিদ্বান্তে অনড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। তবে আন্দোলনকারীদের কিছু কর্মকাণ্ডও ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে গত শনিবার আর্ক দ্যু ত্রায়োমফের ঐতিহাসিক ভাস্কর্যগুলো ভাঙার ঘটনা বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম কমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ফ্রান্সে চলমান বিক্ষোভ সহজে দমন করা যাবে না বলে দাবি করছে বিক্ষোভকারীরা। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও অন্যান্য দাবি নিয়ে আগামী শনিবার একটি র্যালির পরিকল্পনা করছে বিক্ষোভকারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি নিয়ে ফ্রান্স সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিডি প্রতিদিন/কালাম