এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। শত শত বছর ধরে মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ না পেলেও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, যেসব গ্রহে পানির অস্তিত্ব রয়েছে সেখানে প্রাণীর অস্তিত্ব মেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এবার তেমনই একটি ভিন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা যেখানে প্রাণের হদিস মেলার সম্ভাবনা প্রবল। সিয়াটলে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৩৩তম বৈঠকে জানানো হয়েছে, নাসার কেপলার টেলিস্কোপের পাঠানো তথ্যাদিই ওই ভিন গ্রহটির খোঁজ দিয়েছে। ভিন গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘কে-২-২৮৮বিবি’। গ্রহটি পৃথিবীর আকারের দ্বিগুণ। গবেষণাপত্রটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, গ্রহটি আমাদের থেকে ২২৬ আলোকবর্ষ দূরে ‘টরাস’ নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থান করছে। এই নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে অনেক ছোট, অনেক হাল্কা আর প্রায় ‘টিমটিম’ করে জ্বলছে। আর এই নক্ষত্রকে ৩১.৩ পার্থিব দিনে একবার প্রদক্ষিণ করছে গ্রহটি। অর্থাত্ ৩১ দিন তিন ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করছে নক্ষত্রকে। নাসার সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর থমাস জুরবুচেন তার টুইটেও ওই আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।
এই ভিন গ্রহটি তার নক্ষত্র থেকে এমন একটি দূরত্বে অবস্থান করছে যেটিকে ‘হ্যাবিটেবল জোন’ বা বাসযোগ্য এলাকা বলা হয়। যেখানে পানির অস্তিত্ব মেলার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। আর গ্রহটি পাথুরে হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ঐ ভিন গ্রহটিতে এবার যদি বায়ুমণ্ডলেরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে একপ্রকার নিশ্চিত হবে প্রাণের বসবাসের বিষয়টি।
গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্রী আদিনা ফিনস্টিন জানিয়েছেন, ওই ভিন গ্রহটি যে তারামণ্ডলে রয়েছে তার নাম ‘কে-২-২৮৮’। সেখানে দু’টি তারা একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কোনও তারামণ্ডলের এই অবস্থাকে বলে ‘বাইনারি সিস্টেম’। সেখানকার দু’টি তারাই আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে অনেকটা ছোট। তাদের তেজও খুব কম। বলা ভালো, তারা ‘টিমটিম করে জ্বলছে’। তবে এই ভিন গ্রহটির বিশেষত্ব এটাই যে, তা তুলনায় আরও ছোট আর বেশি টিমটিম করে জ্বলা তারাটিকেই প্রদক্ষিণ করছে। ওই নক্ষত্রমণ্ডলের দু’টি তারা একে অন্যের চেয়ে রয়েছে ৫১০ কোটি মাইল দূরে। যার মানে, আমাদের সূর্য থেকে শনি যতটা দূরে রয়েছে, ওই নক্ষত্রমণ্ডলের দু’টি তারা একে অন্যের চেয়ে রয়েছে তার ৬ গুণেরও বেশি দূরত্বে অবস্থান করছে। ফিনস্টিন বলেছেন, আকারের জন্যই এই ভিন গ্রহটি কিছুটা বিরল প্রকৃতির। এখনও পর্যন্ত যত ভিন গ্রহের হদিশ মিলেছে (প্রায় ৪ হাজারটি) এর কোনটিই আকারে, আচরণে এই ভিন গ্রহটির মতো নয়। তাই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যের জট খুলতে এই ভিন গ্রহটি পথ দেখাতে পারে। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম