১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ১৫:৫৮
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ভারতে নোবেলজয়ী অভিজিৎকে নিয়ে 'তাচ্ছিল্য' যে কারণে, উচ্ছ্বাস নেই বিজেপির!

অনলাইন ডেস্ক

ভারতে নোবেলজয়ী অভিজিৎকে নিয়ে 'তাচ্ছিল্য' যে কারণে, উচ্ছ্বাস নেই বিজেপির!

চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, তাঁর স্ত্রী এস্তার দুফলো এবং মাইকেল ক্রেমার। এদিকে, অভিজিৎ ব্যানার্জির নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে ঘিরে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তার অনুসারী ধর্মান্ধ ও বর্ণবাদী কিছু হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন। 

কারণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলসহ নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছেন অভিজিৎ। এছাড়া অভিজিৎ ব্যানার্জি যেহেতু নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীকে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য 'ন্যায়' নামের একটি প্রকল্প তৈরি করে দিয়েছিলেন, তাই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোও তার এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে কিছুটা নিস্পৃহ বলে মনে করছেন অনেকেই।

জানা যায়, পুরস্কার ঘোষণার প্রায় চার ঘণ্টা পর কেবল একটি সাদামাটা টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যিনি সামাজিক মাধ্যমে অন্য প্রায় সব ভারতীয় নেতানেত্রীর থেকেই এগিয়ে থাকেন। তিনি লেখেন, অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতি স্ভেরিয়াস রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার পাওয়ার জন্য অভিজিৎ ব্যানার্জিকে অভিনন্দন। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

কলকাতার সিনিয়ার সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত মনে করেন, সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা যে অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জির মত অর্থনীতিবিদের নোবেল জয়কে ঠিকমতো হজম করতে পারবেন না, এটিই স্বাভাবিক।

হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা কটাক্ষ করছেন সোমবার থেকেই। কেউ বলছেন, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারই নেই।

কেউ টেনে আনছেন আরেক নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকেও। বলছেন, অভিজিৎ ব্যানার্জি আর অমর্ত্য সেনদের মতো অর্থনীতিবিদদের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এ দুর্দশা। কেউ অর্থনীতির নোবেল বলে পরিচিত স্ভেরিয়াস রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার যে নোবেল নয়, সেটি প্রমাণ করার জন্য নানা তথ্য আর ছবি দিচ্ছেন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামানও। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অর্থনীতির অধ্যাপক অমিত শোভন রায় অবশ্য বলেন, অভিজিৎ ব্যানার্জি যেসব সমালোচনা করেছেন, সেগুলো রাজনৈতিক সমালোচনা ছিল না- সেগুলো ছিল একজন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিভঙ্গি।

একদিকে যখন সামাজিক মাধ্যমে অভিজিৎ ব্যানার্জিকে কটাক্ষ করা হচ্ছে, অন্যদিকে ওইসব মন্তব্যকে ট্রোলও করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
ট্রোলগুলির সুর মোটামুটি একই- বিজেপি সরকারের সমালোচনাকারী অর্থনীতিবিদ নোবেল পেয়ে যাওয়ায় সরকার-সমর্থকদের গাত্রদাহ হচ্ছে। সে জন্যই অনেক দেরিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাদামাঠা টুইট আর তাঁর সমর্থকদের নোবেল নিয়েই নানান প্রশ্ন!

এদিকে, নোবেলজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সফল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, অভিজিৎ ব্যানার্জির কৃতিত্ব অনেক বেশি। সৌরভ জানান, তিনি কখনো অভিজিৎ-এর সম্মুখীন হননি, কিন্তু তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্বের কথা জানেন। কোনো একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার ব্যাপারেও আশা ব্যক্ত করেন সৌরভ গাঙ্গুলি।

নোবেলজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জিকে অভিনন্দন জানিয়ে সৌরভ বলেন, এটা আরো বড় কৃতিত্ব। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কখনো উঁনার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। উনি একজন বিশিষ্ট মানুষ এবং আমি আশাবাদী একদিন উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে।
অভিজিতের জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৬১ সালে। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে কলকাতাতেই। কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে পড়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতেও কেটেছে শিক্ষাজীবনের একটি অংশ। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি হাভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন।

অভিজিৎ ব্যানার্জির প্রথম স্ত্রী ছিলেন এমআইটির প্রভাষক অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জি। অভিজিৎ-অরুন্ধতীর বিচ্ছেদের পর ২০১৬ সালে মারা যান এ দম্পতির একমাত্র সন্তান কবির ব্যানার্জি। পরে গবেষণার সঙ্গী এস্তার দুফলো ২০১৫ সালে অভিজিতের জীবনসঙ্গী হন।

এদিকে, সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি অর্থনীতিতে নোবেলের জন্য এই তিন জনের নাম ঘোষণা দিয়ে বলেছে, বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিরসনে এই ত্রয়ী আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। মাত্র দুই দশকে তাদের পরীক্ষামূলক গবেষণা উন্নয়ন অর্থনীতির মোড় পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। এটা গবেষণার একটি নতুন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর