পাকিস্তানে নারী অধিকার এখনও প্রশ্নের মুখে। একবিংশ শতাব্দীতেও দেশটিতে অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয় নারীদের। সম্প্রতি নারী দিবসেও প্লেকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে রাস্তায় নামে নারীরা। এতে তাদের স্লোগান ছিল- “আমার শরীর, আমার পছন্দ”।
কিন্তু এই আন্দোলনেও বাধাপ্রাপ্ত হন তারা। এক দল পুরুষ তাদের সেই আন্দোলনে হামলা চালায় এবং শেষ পর্যন্ত তা পণ্ড করে দেয়।
পাকিস্তানে নারী অধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু সেখানে পরিবর্তন কিছু হয়নি। দেশটিতে এখনও চলছে ‘অনার কিলিং’। শুধু মাত্র পরিবারের সম্মান রক্ষার অজুহাতে নারীদেরকে হত্যা করা হয় দেশটিতে।
এমন একটি ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে। দেশটির দক্ষিণ পাঞ্জাবের কান্দিল বালুচ নামের এক মডেল ও অভিনেত্রীকে তার ভাই হত্যা করে। তার অপরাধ ছিল মডেলিং ও শোবিজ অঙ্গনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। ওই সময় কান্দিল বালুচ নিজেকে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করছিলেন, খ্যাতির জন্য। তাকে মাতাল অবস্থায় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যেটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এর কিছুদিন পরই তার ভাই তাকে হত্যা করে।
উল্লেখ্য, কান্দিাল বালুচ, বেলুচিস্তানের নাগরিক ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন দক্ষিণ পাঞ্জাবের। বেলুচিস্তানে পাকিস্তান সরকারের অমানবিক ও অবৈধ যুদ্ধের বিরোধিতা করে মানবতার খাতিরে নিজের নাম পাল্টিয়ে তিনি তার নতুন নাম দেন কান্দিল বালুচ।
কান্দিল বালুচের জন্ম ১৯৯০ সালে। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় যৌন নিগ্রহের শিকার হন তিনি। এক সময় বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। হয়ে ওঠেন একজন বিদ্রোহী নারী। নিজের পায়ে দাঁড়াতে মডেলিংয়ে জড়ান তিনি।
শোবিজ অঙ্গনের আয় থেকেই প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার রুপি মা-বাবাকে দিতেন কান্দিল বালুচ। অথচ বাবা-মা না খেয়ে থাকলেও খোঁজ নিতেন না তার ভাই। শুধু তা-ই নয়, তিনি তার বোনকেও সহযোগিতা করতেন। প্রায়ই দামি উপহার দিতেন। কিন্তু তার ভাই তাকে বাঁচতে দেয়নি।
একদিন তার ভাই তাকে ডেকে নেয় এবং হত্যা করে। এভাবেই নিজের জীবন হারাতে হয় বালুচকে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান’ এর তথ্য মতে, সে বছর দেশটিতে মোট ৩২৬টি অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩১২টি ঘটনার শিকার নারী। এখনও দেশটিতে নারী সাংবিধানিকভাবে পুরুষের অর্ধেক অধিকার পায়।
বিডি প্রতিদিন/কালাম