ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) সিএনএন টিভি আয়োজিত প্রথম টাউন হল মিটিংয়ে জো বাইডেন বললেন, ‘আমি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বদ্ধ পরিকর। আমি ডেমক্র্যাট হিসেবে লড়ছি, তবে আমি জয়ী হলে দলমত নির্বিশেষে সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবো। আমি কখনোই শুধু ডেমক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট হবো না। আমি হবো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।’
পেনসিলভেনিয়া স্টেটের মুজিক সিটিতে অনুষ্ঠিত এ মিটিংয়ে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ও ভোটার সুজান কনোর্স’র প্রশ্নের জবাবে বাইডেন আরো বলেছেন, ‘যখন থেকে আমি রাজনীতিতে পদার্পণ করেছি এবং ২৯ বছর বয়সে যখন আমি সর্বপ্রথম ইউএস সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হই, তখোন থেকেই আমি যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রত্যয়ে কাজ করেছি। আমি সকল ভোটার এবং ডেমক্র্যাটদের মধ্যে সেতুবন্ধনে সচেষ্ট থেকেছি। সকলের সামগ্রিক কল্যাণের প্রয়োজনে সবসময় দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির উর্দ্ধে থাকার চেষ্টা করেছি। ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ এবং প্রকাশ্য বক্তব্য/মন্তব্য থেকে আমেরিকানদের মধ্যেকার ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেই সুজান এমন প্রশ্ন করেছিলেন।
গত নির্বাচনের মত আসছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনেও রাশিয়া অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ট্রাম্পকে জয়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে এফবিআই’র পরিচালক ক্রিস্টফার এ র্যা বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সম্পর্কিত কমিটিতে প্রদত্ত বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এফবিআই পরিচালক আরো বলেছেন, ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী যো বাইডেনকে কালিমালিপ্ত করতে এমনসব উদ্ভট-অকল্পনীয় প্রচারণা চালাবে, যার মাধ্যমে বাইডেনের প্রতি ভোটারের বিরূপ ধারণা তৈরী হয় এবং সাধারণ ভোটাররা তাকে ভোট দানে বিরত থাকে।
রাশিয়ার ধারণা, ডেমক্র্যাটরা হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হলে মস্কোর স্বার্থের পরিপন্থি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর্থিক লোকসানের ভিকটিম হবে রাশিয়া। মোটকথা, ট্রাম্পের মাধ্যমে রাশিয়া যে সুবিধা ভোগ করছে তা সম্ভব হবে না। এজন্যেই রাশিয়া বাইডেনকে হোয়াইট হাউজে চায় না।
এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত/মন্তব্য জানতে চাইলে ঐ টাউন হল মিটিংয়ে যো বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে নির্বাচনে কোন ধরনের প্রভাব খাটালে অথবা হস্তক্ষেপ করলে।’
বাইডেন বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে যদি রাশিয়া বেআইনী প্রভাব বিস্তার করে তাহলে ভ্লাদিমির পুতিনকে আর্থিক অবরোধের মুখে পড়তে হবে। ডেমক্র্যাটরা কখনোই তাকে ছাড় দেবে না।’
বাইডেন উল্লেখ করেন, ‘সেজন্যে অবশ্যই চড়া মূল্য দিতে হবে। এবং পুতিনও সেটি জানেন, সেজন্যেই পুতিন কখনো চান না আমি প্রেসিডেন্ট হই। তিনি আমাকে ভালো করেই চেনেন এবং তিনি এটিও জানেন যে, আমি যা বলছি তা করেই ছাড়বো। তবে আমি যুদ্ধের কথা বুঝাচ্ছি না। যদিও তাকে খেসারত দিতেই হবে। এবং সেটি হবে অর্থনৈতিক খেসারত।’ এ সময় মিটিংয়ের সঞ্চালক বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলেও বাইডেন এর বেশী কিছু জানাতে চাননি।
তিনি কি রাশিয়াকে শত্রু বিবেচনা করেন-এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করছি রাশিয়া হচ্ছে আমাদের প্রতিপক্ষ। সত্যিকার অর্থেই তা আমি বিশ্বাস করি।’ এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, চীন-ও কি তার প্রতিপক্ষ। জবাব দেন ভিন্নভাবে। ‘আমি মনে করি চীন হচ্ছে আমাদের কমপিটিটর (প্রতিদ্বন্দ্বী)। খুবই সিরিয়াস কমপিটিটর।’
কংগ্রেসের শুনানীতে এফবিআই পরিচালক আরো উল্লেখ করেছেন, ‘গোয়েন্দারা খুবই উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হ্যাক করেছিল ডেমক্র্যাটিক পার্টির ই-মেইল। এমনকি রাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেও হ্যাক করেছিল। এবারও রাশিয়ানরা নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাদের অপছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যতরকমের জঘন্য মিথ্যাচার রয়েছে, সেটি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও রাশিয়ার রাষ্ট্রিয় প্রচার মাধ্যমে চালাতে পিছ পা না। বিপুল অর্থ ব্যয়ে অন্যভাবেও বাইডেনের চরিত্র হনন এবং জনসমক্ষে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার পাশাপাশি তার চরিত্রে কালিমালেপনেও দ্বিধা করবে না মস্কো। ইতিমধ্যেই ফেসবুক এবং টুইটারকে সতর্ক করা হয়েছে রাশিয়া থেকে তেমন অপপ্রচারণা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।’
অপরদিকে, এফবিআইয়ের পরিচালকের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বৃহস্পতিবার রাতেই এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘রাশিয়ার চেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে চীন। চীন সর্বাত্মকভাবে সক্রিয় রয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অশুভ প্রভাব খাটাতে।’ ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ‘ক্রিস (এফবিআই পরিচালক), তুমি চীনের কোন তৎপরতাই দেখছো না? রাশিয়ার চেয়ে অনেক বড় ধরনের হুমকি হচ্ছে চীন। রাশিয়া, রাশিয়া, রাশিয়ার চেয়ে অনেক বড় হুমকি হচ্ছে চীন।’ ‘তারা উভয়েই এবং সাথে আরো কটি দেশ রয়েছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্যে। আমাদের নির্বাচনের দুই নম্বরী ব্যালট জালিয়াতিতে ওরা (চীনসহ কটি দেশ) অপ্রত্যাশিতভাবেই কলকাঠি নাড়বে। সেটি দেখা উচিত’-উল্লেখ করেছেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প।
জানা গেছে, প্রধান দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প এবং বাইডেনের মধ্যেকার প্রথম সরাসরি টিভি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ২৯ সেপ্টেম্বর। এ জন্যে উভয় প্রার্থীর মধ্যে প্রস্তুতি হিসেবে বাইডেনের আগেরদিন ট্রাম্পও ফিলাডেলফিয়ায় একটি ভার্চুয়াল টাউন হল মিটিংয়ে কথা বলেছেন। ভোটারের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। সে সময় তিনি অস্বীকার করেছেন যে, করোনাভাইরাসের ভয়ংকর তাণ্ডবকে তিনি গুরুত্ব দেননি। তবে তিনি মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেননি। ‘অনেক আমেরিকানই মাস্ক পরতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। অথচ তারই গঠিত টাস্কফোর্স প্রথম থেকেই মাস্ক ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মাস্ক ব্যবহার করা হলে অনেক মৃত্যু ঠেকানো যেত বলে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন এবং এখনও করছেন।
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন