বিতর্কিত অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখের দখলকে কেন্দ্র করে আজারবাইজানের সাথে হওয়া সংঘাতে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর অনেকে হতাহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান।
তবে পাশিনইয়ান দাবি করেছেন যে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী এখনও ঐ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এদিকে, চলমান এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তুরস্ক ও রাশিয়ার নেতারা দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে গত চার দশক ধরে এই দুই দেশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।
বর্তমানে ঐ অঞ্চলকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে যে সহিংসতা চলছে তার শুরু ২৭শে সেপ্টেম্বর থেকে। গত কয়েক দশকের মধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখকে নিয়ে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এটি। দুই পক্ষেরই শত শত মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করলেও তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
৮০'র দশকের শেষে এবং ৯০'এর দশকের শুরুতে এই অঞ্চলের দখলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে দুই দেশ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও তারা কখনোই স্থায়ীভাবে শান্তি চুক্তি করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান কী বলেছে?
বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া এক ভাষণে পাশিনিয়ান বলেন আর্মেনিয়ার 'বহু হতাহত' হয়েছে। তিনি বলেছেন, "আমি আমাদের সকল ভুক্তভোগী, শহীদ, তাদের পরিবার, অভিভাবক, বিশেষ করে শহীদদের মায়েদের উদ্দেশ্যে নতজানু হয়ে সম্মান জানাই। তাদের এই ক্ষতিকে আমি আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করছি।"
"আমাদের সবার জানা প্রয়োজন যে আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতি পার করছি।" কিন্তু পাশিনিয়ান বলেছেন, 'জনশক্তি ও উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও' আর্মেনিয়ার সেনারা এখনও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং প্রতিপক্ষের 'জনশক্তি ও উপকরণের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করেছে।'
তিনি বলেন, "আমাদের জয়ী হতেই হবে, আমাদের বেঁচে থাকতেই হবে। আমাদের নিজেদের ইতিহাস তৈরি করতে হবে। আর আমরা এরই মধ্যে ইতিহাস তৈরি করছি। তৈরি করছি আমাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের গল্প, আমাদের মহাকাব্য।"
কী হচ্ছে ঐ অঞ্চলে?
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ অভিযোগ তুলেছেন, আর্মেনিয়া তাদের গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইনে আক্রমণ করেছে। তুরস্কের প্রচার মাধ্যম হেবারতুর্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আর্মেনিয়া আমাদের পাইপলাইন আক্রমণ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে।"
"তারা যদি সেখানকার পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমি বলতে পারি যে এর পরিণতি গুরুতর হবে।" ওদিকে এই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বুধবার নিজেদের মধ্যে ফোনে আলোচনা করেছেন।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে: "সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে অতি দ্রুত যৌথ উদ্যোগ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নাগোর্নো-কারাবাখ দ্বন্দ্বের সমাধান করার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন তারা।"
নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল :
৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার (১,৭০০ বর্গ মাইল) আয়তনের একটি পর্বতাঞ্চল।
ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান এবং মুসলিম তুর্কদের আবাসস্থল।
সোভিয়েত আমলে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পায়।
আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু জনসংখ্যার অধিকাংশই জাতিগত আর্মেনিয়ান।
১৯৮৮-৯৪ সালের যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয় এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়।
১৯৯০ এর যুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী আজারবাইজানের কাছের ছিটমহলের কাছে কিছু জায়গা দখল করে।
১৯৯৪ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে অনেকটাই অচল অবস্থা বিরাজ করছিল।
তুরস্ক প্রকাশ্যেই আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে।
আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক