সময়ের সাথে সাথে ভারতের কৃষকদের অরাজনৈতিক বিক্ষোভে ক্রমাগত সমর্থন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘু ও তিকরি এলাকায় হাজার হাজার কৃষক আন্দোলন দেখিয়ে আসছে- সোমবার তা ১২তম দিনে পড়ল। প্রথমে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষকরা যোগ দিলেও পরে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের কৃষকরাও তাতে যোগ দিয়েছে।
এদিকে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওই বিক্ষোভে যোগ দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এদিন সকালের দিকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘু এলাকায় গিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের সাথে কথা বলেন, তাদের অভাব অভিযোগ শোনেন। কেজরিওয়ালের সাথেই ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ও মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ও বিধায়করা।
পরে কেজরিওয়াল জানান, ‘কৃষকদের সব দাবিকেই আমরা সমর্থন জানাই। তাদের দাবি ও বিষয়গুলি সবই বৈধ। প্রথম থেকেই আমি ও আমার দল তাদের সাথে আছে।’
তার অভিমত ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি একজন সেবাদার হিসাবে এখানে এসেছি।’
এদিকে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ যাদব। এদিন দুপুরে লখনউয়ের বিক্রমাদিত্য মার্গে অবস্থিত নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ‘কিষাণ যাত্রা’ শুরুর মুখেই তাকে আটক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। পরে সেখানেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাস্তার বসে পড়েন অখিলেশ। এরপরই পুলিশ তাকে আটক করে বাসে তোলে এবং ওই স্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এদিনই দুপুরেই পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে এক জনসভা থেকে কৃষকদের লড়াইয়ের সর্বতোভাবে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। ধানের ছড়া হাতে নিয়ে তার বার্তা ‘আমরা কৃষকদের পাশে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।’ জনবিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মমতা আরও বলেন ‘কৃষি বিল একটা বেআইনি বিল। হয় এই আইন প্রত্যাহার করুক না হয় বিজেপি সরকর ক্ষমতা ছাড়ুক।’
এদিকে কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষক সংগঠনের ডাকা আগামীকালের (মঙ্গলবার) ডাকা ভারত জুড়ে হরতালে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজ্যগুলিকে সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সূত্রে খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে এক নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত রাজ্যগুলিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে বলা হয়েছে। হরতালকে ঘিরে অশান্তি এড়াতে দিল্লিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে দিল্লি পুলিশ। সংসদ ভবন ও রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজধানী জুড়ে ৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই এই হরতালকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস, সিপিআইএম, বসপা, এনসিপি, আপ, ডিএমকে, এনডিএ’র শরিক দল রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি (আরএলপি) মতো রাজনৈতিক দলগুলি। হরতালকে নৈতিক ভাবে সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
মেদিনীপুরের জনসভা থেকে মমতা বলেন ‘মঙ্গলবার সারা ভারত জুড়ে যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে আমাদের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল সম্পূর্ণভাবে তাকে সমর্থন জানাচ্ছি। সরকারে থেকে আমরা কোন হরতালকে সমর্থন জানাইনি, কারণ এটাই আমাদের পলিসি। কারণ হরতাল করে মানুষের রুটি রোজগার বন্ধ করতে চাই না। কিন্তু আমি তৃণমূলের তরফ থেকে বলছি যে কৃষকদের আগামীকালের আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছি।’
কৃষি আইন প্রত্যহারের দাবি জানিয়ে দুই দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চেধুরী। অন্যদিকে সোমবার টুইট করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও জানিয়েছেন, ‘আদানি-আম্বানি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতেই হবে। এছাড়া কোন কিছুই মানা হবে না।’
কৃষক আন্দোলন নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় কেন্দ্রকেই দোষারোপ করা হয়েছে শিবসেনার মুখপাত্র ‘সামনা’তেও। সেখানে বলা হয়েছে, কৃষি আইন যদি প্রত্যাহার করা হয়, তবে সবচেয়ে বড় মনের পরিচয় দেওয়া হবে।
কৃষকদের সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই সরকারের সাথে পঞ্চম দফার বৈঠক হলেও কোন সুরাহা বের হয়নি। আগামী ৯ ডিসেম্বর ফের আন্দোলনকারী কৃষকদের সাথে বৈঠকে বসবে কেন্দ্রীয় সরকার। বৈঠকে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার।
আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অনেকে তাদের সরকারের তরফে প্রাপ্ত সম্মাননাও ফিরিয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন রাজীব গান্ধী খেল রত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত জাতীয় বক্সার বিজেন্দর সিং। বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার না হলে সরকারের তরফে পাওয়া সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বিজেন্দর।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা