ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরে এই হামলা শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার হামলার ষষ্ঠ দিন। রাশিয়া-ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দেশটিতে রুশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে হতাহত হয়েছে অনেক মানুষ। পরিস্থিতি বিবেচেনায় দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন সেখানকার নাগরিকরা। এরই মধ্যে প্রতিবেশি দেশগুলো আশ্রয় নিয়েছে কয়েক লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিকরা।
রাশিয়ার এই সামরিক অভিযানে ইউক্রেনে আটকে পড়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ। তারাও জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশি দেশ হয়ে স্বদেশে ফিরছেন।
তবে এই পরিস্থিতিতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিলেন এক ভারতীয় মেডিকেল ছাত্রী। তার নাম নেহা। ১৭ বছরের এই মেডিকেল শিক্ষার্থীর বাড়ি ভারতের হরিয়ানায়।
ইউক্রেনে গিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে। কিন্তু সেখানকার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পালানোর উপায় খুঁজছেন তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ ফিরেছেন। আবার সঅনেকে এখনও ফিরতে পারেননি। তবে ফেরার জন্য অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু, হরিয়ানার সেই ১৭ বছরের নেহা তাদের থেকে একেবারে আলাদা। বর্তমানে অনেকের মতোই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ‘বম্ব শেল্টারে’ আছেন মেডিকেলের এই ছাত্রী। তিনি ইউক্রেনেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তার অবশ্য একটা আবেগের দিক আছে। যে বাড়িতে তিনি এতদিন থাকছিলেন, সেই বাড়ির মালিককে সাহায্য করতে চান নেহা। ওই বাড়িওয়ালা ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন। যোগ দিয়েছেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। নেহা যখন প্রথমে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন, সেই সময় তিনি কোনও হোস্টেল সিট পাচ্ছিলেন না। সেই সময় কিয়েভে এক কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন নেহা।
নেহার মা স্কুল শিক্ষিকা। তার স্কুল দাদরি জেলার চারখিতে। নেহার বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নেহা সেখানে ভালোই আছেন। এর আগে তার ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। বাইরে যুদ্ধ হওয়ার শব্দ পাওয়া গেলেও, নেহারা এখনও আক্রান্ত হননি।
নেহার এক আত্মীয়া সবিতা থাকেন ডেনমার্কে। তিনি সেখানকার স্কুল শিক্ষিকা। হরিয়ানার ঝাঁনসওয়া গ্রামের বাসিন্দা সবিতা। নেহার বাড়ির মালিক তিন দিন আগে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান নেহার সঙ্গেই বম্ব শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। নেহাও তাদের সঙ্গেই আছেন। নেহার মা প্রথমে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেহাতে ইউক্রেন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন।
তাতেও ব্যাপক সমস্যা হচ্ছিল। তবুও একটা ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। কিন্তু, নেহাই ফিরতে চাননি। এই অসময়ে তিন সন্তান-সহ ওই নারীকে ফেলে তিনি আসতে চাননি। নেহার এই সাহসিকতা দেখে অবাক পরিবার-পরিজন। নিজের জীবনের বদলে তার বাড়ির মালিকের স্ত্রী-সন্তানদের জীবন বাঁচানোই যেন এখন তার কাছে সবকিছু। সূত্র: ডেকান হেরাল্ড, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
বিডি প্রতিদিন/কালাম