মারিউপোল, ইউক্রেনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় একটি নগরী। কালমিয়াস নদীর মুখে অবস্থতি এই নগরীতে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। আজভ সাগরের উপকূলবর্তী নগরীটিকে বর্তমানে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। সেখানে চালানো হচ্ছে তীব্র গোলা ও বোমাবর্ষণ।
রুশ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছে গোটা মারিউপোল নগরী। তবে একটি জায়গা অক্ষত রেখেছে তারা, সেটি হচ্ছে ‘বন্দর অঞ্চল’। সেখানে কোনও ধরনের হামলা চালানো হয়নি।
মারিউপোল বন্দরের একজন কর্মকর্তা, যিনি গতকাল বন্দিদশা থেকে পালাতে সক্ষম হন, তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তি (যিনি নিরাপত্তার কারণে নিজের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন) বলেন, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ছয়টি বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বন্দরে আটকা পড়ে। কিন্তু ‘শহরের অন্যান্য অংশের মতো নয়, বরং বন্দরটি তুলনামূলকভাবে খুব কম বোমা হামলার শিকার হয়েছে।”
মারিউপোল আজভ সাগরের বৃহত্তম বন্দর এবং কৃষি পণ্য রফতানির জন্য ইউক্রেনের বৃহত্তম বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বন্দর নগরী দখলে নিতে পারলে সেটি রাশিয়ার জন্য বড় কৌশলগত সাফল্য হবে।
যে কারণে মারিউপোলের জন্য মরিয়া রাশিয়া
ক্রিমিয়া ও ডনবাসের মধ্যে স্থল করিডর স্থাপন: মানচিত্রে মারিউপোল ছোট্ট একটি জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু ক্রিমিয়ায় জড়ো হওয়া বিশাল রুশ বাহিনীর সামনে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে আছে এ শহর। রুশ বাহিনী তাদের কমরেড ও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে উত্তর-পূর্বে এগোতে চায়।
ইউক্রেনের অর্থনীতির গলা টিপে ধরা: কৃষ্ণসাগরের অংশ আজভ সাগরের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর মারিউপোল। আজভ সাগর অঞ্চলে এটি সবচেয়ে বড় বন্দর। গভীরতার কারণে এ বন্দরে রয়েছে বড় বড় জাহাজ নোঙর করার সুবিধা। লোহা ও ইস্পাতের কর্মযজ্ঞের জন্য সুপরিচিত। সাধারণ সময়ে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের কাছে ইস্পাত, কয়লা ও শস্য রপ্তানিতে ইউক্রেনের বড় বাণিজ্য কেন্দ্র এই মারিউপোল।
আট বছর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। এর পর থেকে সেখানে থাকা রুশ বাহিনী আর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র ডোনেটস্ক ও লুহানস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে স্যান্ডউইচ হয়ে আছে মারিউপোল। এ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানো ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য হবে বড় আঘাত। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম