ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান নিয়ে উত্তেজনার মাঝেই ইউরোপ সফর করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার তিনি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের উদ্দেশে উড়াল দেন।
বৃহস্পতিবার সেখানে তিনি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। একই সঙ্গে এদিন তিনি ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেতা ও মিত্র দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ইউরোপের এই সফরে কোন বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট:-
১. একতা প্রদর্শন
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়ার অভিযানের প্রথম দিকে জরুরি ভিত্তিতে ঐকমত্যের কিছু প্রথাগত বাধা দূর করে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু রুশ অভিযান যতই দীর্ঘায়িত হবে, মতবিরোধের সম্ভাবনাও ততই বাড়বে। তাই বাইডেনকে তার মিত্রদের বোঝাতে হবে যে ন্যাটোকে শক্তিশালী করা কোনও অস্থায়ী শর্ত নয়, বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘নতুন স্বাভাবিক’ ঘটনা।
২. শরণার্থী সংকট
রুশ অভিযানের কারণে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সিংহভাগ গ্রহণ করেছে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড। লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য নিজেদের সীমান্ত খুলে দিয়ে ভীষণ চাপের মধ্যে পড়েছে। যদি বিষয়টি দক্ষতার সাথে পরিচালনা না করা যায়, তাহলে এটি সামাজিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে পোল্যান্ডকে।
এমতাবস্থায় পোল্যান্ড একটি নির্ভরযোগ্য ন্যাটো সদস্য হিসেবে নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড়ই উদ্বেগের বিষয়।
৩. সামরিক সমাধান
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরও উন্নত দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করার চেয়ে বলাটা অনেক সহজ।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা, এরপর রাশিয়ার জবাব বা প্রতিক্রিয়া এবং ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র বা রসদ চলে যাওয়া- দু’টিই উদ্বেগের বিষয়। আর ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়া এগুলোর কোনওটিই করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪. নিষেধাজ্ঞার রোডম্যাপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নেতৃত্বে আরোপ করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে ইউক্রেনের ওপর অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখতে খুব কমই কাজ করেছে।
যদিও পশ্চিমা মিত্ররা জোর দিয়ে বলে যে, নিষেধাজ্ঞার যন্ত্রণা সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। তারপরও এই অভিযানের কারণে রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার নতুন উপায় বের করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় নেতাদের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে।
৫. চীন প্রশ্ন
চীনকে রাশিয়া থেকে দূরে রাখতে এবং সম্ভব হলে এর নিন্দায় আরও সোচ্চার হতে রাজি করার জন্য আমেরিকা এবং ইউরোপকে একত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাশিয়াকে খোলাখুলি সাহায্য করলে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি ইতোমধ্যেই চীনা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
তবে আসন্ন জি-২০ অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে চীনের সাম্প্রতিক সমর্থন থেকেই বোঝা যায় যে কাজটি সহজ হবে না।
উল্লেখ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ২৯তম দিনে গড়িয়েছে রুশ অভিযান। বিগত ২৮ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম