সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে নিজের টুইটার পরিচালনা পদ্ধতিকেই জোর সমর্থন করেছেন ইলন মাস্ক। সান ফ্রান্সিসকোতে টুইটার সদরদপ্তরে বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস ক্লেয়টনের সাথে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেছেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। সাক্ষাৎকারে তিনি যে ছয়টি বিষয়ে কথা বলেছেন তা হলো-
১. টুইটারে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর টুইটারে বেশি বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট গেছে, এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ইলন মাস্ক। যদিও চলতি বছরের শুরুতে মাস্কের নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আনার পর টুইটারের ভেতর থেকেই কিছু ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছিলেন যে, টুইটার তার ব্যবহারকারীদের ট্রল, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ভুল তথ্য এবং শিশু যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে অক্ষম।
২. বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন
যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনে দেশের প্রায় অর্ধেকের মতো ভোটারের ভোট পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ক বলেছেন, ‘আমি তাদের দলে নই। আমি বাইডেনকে ভোট দিয়েছি’। সাক্ষাৎকারের আরেক অংশে তিনি ট্রাম্পের ওপর টুইটার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মপক্ষই সমর্থন করেছেন। সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ করে টুইটার ২০২১ সালে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছিল।
৩. মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে জয়
মাস্ক দাবি করেছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অটোমেটেড অ্যাকাউন্ট অপসারণে তার চেষ্টার কারণে টুইটারে ভুল তথ্য দেওয়া কমেছে। তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা হলো এখন আগের চেয়ে কম ভুল তথ্য সেখানে। তবে বাইরের অনেক বিশেষজ্ঞ এর সাথে একমত নন। অনলাইন মিসইনফরমেশন নিউজগার্ডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় ভুল তথ্য ছড়ানোর অ্যাকাউন্টগুলো তার দায়িত্ব গ্রহণের পর বরং স্পাইক করেছে। আরও কিছু সমীক্ষা থেকেও একই ধারণা পাওয়া গেছে। টুইটারের দায়িত্ব তিনি নেওয়ার পর সবচেয়ে জনপ্রিয় কিন্তু অবিশ্বস্ত অ্যাকাউন্টগুলোর লাইক ও রিটুইট এনগেজমেন্ট বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
বিবিসিও আগে নিষিদ্ধ করা প্রায় এক হাজার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেছে। এসব অ্যাকাউন্ট মিস্টার মাস্ক দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার সচল হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক তৃতীয়াংশ হয়রানিমূলক ও অসত্য তথ্য ছড়িয়েছে।
এর মধ্যে আছে ভ্যাকসিন বিরোধী অসত্য তথ্য, সমকামী বিরোধিতা এবং ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের মতো বিষয়।
৪. তিনি টিকটক নিষিদ্ধের বিপক্ষে
মাস্ক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপটি তিনি ব্যবহার করেন না। কিন্তু তিনি এটি বন্ধ করে দেওয়ার বিপক্ষে। চীনা মালিকানাধীন থাকায় নিরাপত্তা ইস্যুকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। কিছু দেশ এর মধ্যেই সরকারি কর্মকর্তাদের মোবাইলে এটি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
মাস্ক বলেন, আমি সাধারণত কোনো জিনিস নিষিদ্ধের বিপক্ষে। যদিও তিনি বলেছেন নিষেধাজ্ঞা টুইটারকে সুফল দেবে কারণ আরও বেশি লোক এই প্লাটফর্মে বেশি সময় ব্যয় করবে।
৫. টুইটারের জন্য ৪৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
মাস্ক প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, তিনি যে দামে কিনেছেন টুইটার এখন কেউ সেই দামে কেনার প্রস্তাব দিলে তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করবেন। তিনি যদি বিক্রি করেন, তাহলে এমন ক্রেতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হবে যিনি কত দিয়ে কিনবেন তার চেয়ে বড় বিষয় হবে তিনি কতটা ‘সত্য’কে লালন করেন। তিনি বিক্রি বাড়াতে আর সক্রিয় হয়ে নানা উপায় খোঁজার পক্ষে। যেমন ‘ব্লু টিক’ বা নীল ব্যাজ ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
৬. বিবিসির পরিচিতি পরিবর্তন
মাস্ক নিশ্চিত করেছেন, টুইটারে তিনি বিবিসির পরিচিতি যেভাবে দিয়েছেন সেটি পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ ‘সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত’ থেকে এটি হবে ‘জনগণের অর্থে পরিচালিত’ । প্রায় এক সপ্তাহের বিতর্ক এবং ওই সাক্ষাৎকারের কয়েক ঘণ্টা পর এটি কার্যকর করেছে টুইটার।
বিবিসি তার পরিচিত যেভাবে দেওয়া হয়েছিলো তাতে আপত্তি করে সংস্থাটির স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছিলো। এর অর্থায়ন হয় মূলত ব্রিটিশ জনগণের দেয়া টিভি লাইসেন্স ফি থেকে।
বুধবারের সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছেন, বিবিসি নিজেকে যেভাবে বর্ণনা করে আমরা সেই শব্দগুলো ব্যবহার করাই মনে হয় যথার্থ হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল