ইয়েভগিনি প্রিগোজিন, বিশ্বজুড়ে একটি আলোচিত নাম। রাশিয়া ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারের প্রধান তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে তার ভাড়াটে বাহিনীর দুর্দান্ত সাফল্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এই বাহিনীর নাম। তখনও ততটা আলোচিত ছিল না ইয়েভগিনি প্রিগোজিন নামটি। কিন্তু গত জুনে সেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেন প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। মুহূর্তেই এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। ব্যাপকভাবে আলোচনায় ওঠে আসে প্রিগোজিন নামটি। যদিও বিদ্রোহ প্রত্যাহার করে সমঝোতার মাধ্যমে দেশ ত্যাগ করে বেলারুশে পাড়ি জমান ওয়াগনার প্রধান। কিন্তু দুই মাসের মাথায় বুধবার বিমান বিধ্বস্ত তিনি নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হচ্ছে। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রের সেই গোয়েন্দা কর্মকর্তার সেই আশঙ্কাই সত্যিই হল।
বিদ্রোহের পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেছিলেন, “রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে সময় নিয়ে প্রতিশোধ নেবেন।”
প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটিতে কী হয়েছিল তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার— বিদ্রোহের পর প্রথম প্রিগোজিনের গঠিত বাহিনীকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে— সর্বশেষ পুরোপুরি শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া পক্ষে ওয়াগনার গ্রুপ অনেক বড় অবদান রেখেছিল। ১০ মাসেরও বেশি সময় লড়াই করে রাশিয়াকে বাখমুত শহরের দখল এনে দিয়েছিল তারা। কিন্তু জুনের সেই বিদ্রোহের পর ইউক্রেনে ওয়াগনারের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রিগোজিনকে পর্দার অন্তরালে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু আফ্রিকায় সেনা পাঠিয়ে প্রিগোজিন যে একটি প্রভাব অর্জন করেছিলেন সেটি কাজে লাগিয়ে— কিছু সময়ের জন্য— আবারও প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন তিনি।
সম্ভাব্য মৃত্যুর কয়েকদিন আগে আফ্রিকার কোনও একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন প্রিগোজিন। সেখানে তিনি নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এছাড়া রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটি মস্কোর কাছের তেভার অঞ্চলের ওপর ছিল। বিমানটিতে প্রিগোজিন ছাড়াও ওয়াগনারের আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করে বলা হয়েছে, বিমানটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
এই ঘটনায় শুধু প্রিগোজিনই প্রাণ হারাননি, তার সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন ওয়াগনারের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। জুনে ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ করে মস্কোর পথে যে রওনা দিয়েছিল— সেটির সঙ্গে তিনিও জড়িত ছিলেন। ভাড়াটে এ সেনা সিরিয়ায় তেলখনিগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলেন।
ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে বলা হয়েছে, ওই বিমানে বাহিনীটির আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।
একটি বিষয় এখন পরিষ্কার, আর তা হল- ওয়াগনার বলতে এখন আর কিছু নেই।
বিদ্রোহের পর ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বেলারুশে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বেলারুশে যাওয়া সেসব সেনা দেশটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বেলারুশে যাওয়া সেনাদের মধ্যে অনেকে বেতন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, এ কারণে অনেকে পূর্ব আফ্রিকার দেশে চলে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেলারুশে ওয়াগনারে সেনার সংখ্যা প্রথমে ৫ হাজার হলেও সেটি চার ভাগের তিন ভাগ কমে গেছে।
ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, আফ্রিকার যে দেশগুলোতে ওয়াগনারের শক্ত অবস্থান ছিল সেখানে তারা তা ধরে রাখতে পারবে কিনা।
যদিও আফ্রিকার দেশগুলোয় অবস্থানরত ওয়াগনার সেনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আজ্ঞাবহ নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে প্রশ্ন থাকবে, তিনি প্রিগোজিনের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন কিনা।
আফ্রিকায় ওয়াগনারের যে প্রভাব বিস্তার হয়েছে সেটিতে প্রিগোজিনের অবদান ছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা দেখভাল করছিলেন। ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল।
প্রিগোজিন ছাড়া ওয়াগনার অস্তিত্বহীন দাবি করেন ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সাবেক ভাইস-মার্শাল সিন বেল। গত জুনে বিদ্রোহের পর স্কাই নিউজকে তিনি বলেছিলেন, “প্রিগোজিনকে ছাড়া ওয়াগনার কিছুই না। আর যদি ওয়াগনার গ্রুপ ইয়েভগিনি প্রিগোজিন হয়ে থাকে। তাহলে এটি কীভাবে টিকে থাকবে সেটি দেখা খুবই কঠিন হবে। আমরা যা জানি এরমাধ্যমে (বিদ্রোহ) ওয়াগনারের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।” সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/কালাম
