৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:১৮

মালয়েশিয়ায় চীনাদের তৈরি ‘ভূতুড়ে শহর’

অনলাইন ডেস্ক

মালয়েশিয়ায় চীনাদের তৈরি ‘ভূতুড়ে শহর’

ছবি: গেটি ইমেজেস ভিয়া বিবিসি

মালয়েশিয়ায় একটি দ্বীপে নির্মাণ করা হয়েছে ফরেস্ট সিটি।  চীনারা দক্ষিণ মালয়েশিয়ার উপকণ্ঠে অবস্থিত জোহরে ফরেস্ট সিটি নামের এ আবাসিক এলাকাটি নির্মাণ করেছে।

এর কাছাকাছি বড় শহর জোহর বাহরু ফরেস্ট সিটি থেকে বেশ দূরে। ফলে এর অবস্থান লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে শহরটি সম্ভাব্য বাসিন্দাদেরও আর আকর্ষণ করতে পারছে না। এজন্য স্থানীয় মানুষ শহরটিকে এখন ‌‘ভূতুড়ে শহর’ নামে ডাকে।

এক বছর আগে তথ্য-প্রযুক্তি প্রকৌশলী নাজমি ‘ফরেস্ট সিটি’র এক ব্লকে এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তার বেডরুম থেকে সাগরও দেখা যায়।

ছয় মাসেই নাজমি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তিনি আর এ শহরে থাকতে চাননি। এমনকি তিনি এ শহরকে ‘ভূতুড়ে শহর’ আখ্যা দেন।

ভয়-মিশ্রিত হাসিতে নাজমি হানাফিয়াহ বলেন, ‘আমি সেখান থেকে পালাতে পেরেছিলাম।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ডিপোজিট নিয়ে ভাবিনি, অর্থ নিয়ে ভাবিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম সেখান থেকে চলে আসতে। সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবলে আমি এখনো আঁতকে উঠি। শহরটির চারদিক একেবারে নির্জন। সেখানে শুধু আমি আর আমার চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’

২০১৬ সালে চীনের সর্ববৃহৎ প্রোপার্টি ডেভেলপার ‘কান্ট্রি গার্ডেন’ শহরটি উদ্বোধন করে। এটি ছিল চীনের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের অধীনে একটি মেগা প্রকল্প।

এই সময় চীনের রিয়াল এস্টেট খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটছিল পুরোদমে। প্রকল্পটির জন্য নির্মাতারা দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ঋণ নেন। তারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য শহরটি নির্মাণ করেন।

কান্ট্রি গার্ডেনের পরিকল্পনা ছিল একটি পরিবেশ-বান্ধব শহর গড়ে তোলা, যেখানে থাকবে গল্ফ কোর্স, ওয়াটার পার্ক, অফিস, বার এবং রেস্টুরেন্ট। কোম্পানিটি বলেছিল, শহরটিতে দশ লাখ মানুষ বাস করতে পারবেন।

আট বছর চলে গেছে। কিন্তু এটি একটি ব্যর্থতার স্মারক হিসেবেই রয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে নির্মাতাদের লক্ষ্য ছিল এখানে চীনা স্থানীয় পণ্যের বাজার তৈরি করা। এর মাধ্যমে তারা মূলত উচ্চাভিলাষী মানুষদের বিদেশে দ্বিতীয় একটি বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এর বিক্রয়মূল্য এত বেশি যে, মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য তা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

চীনা ক্রেতাদের কাছে এখানে জায়গা কেনা বিনিয়োগ হিসেবেই গণ্য হয়। কারণ, নাজমির মতো স্থানীয় মালয়েশিয়ানদের কাছে তারা তা ভাড়া দিতে পারবেন।

নাজমি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে স্থানটি ছিল আতঙ্কজনক। আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু আমি খারাপ অভিজ্ঞাতার মুখোমুখি হই। সেখানে আমার কিছুই করার ছিল না।’

ফরেস্ট সিটির পরিবেশ খুবই অদ্ভূতুড়ে—দেখে মনে হয় একটি পরিত্যক্ত রিসোর্ট। জন-মানবহীন এখানকার সৈকত হয়ে উঠেছে যত্নহীন শিশুর খেলার মাঠ, পড়ে আছে মরিচা-পড়া গাড়ি। কুমিরের ভয়ে এখানকার পানিতে সাঁতার কাটাও যায় না।

শপিংমলগুলোতে দোকানপাট বা রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ। কিছু নির্মাণ এলাকা একদম খালি।

রাতে ফরেস্ট সিটি অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়। শহরের প্রত্যেক ব্লকে শত শত অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, কিন্তু আধা ডজনের চেয়ে বেশি অ্যাপার্টমেন্টে বাতি জ্বলতে দেখা যায় না। এখানে যে মানুষ বাস করে, সেটি বিশ্বাস করাই কঠিন।

 সূত্র : বিবিসি   

 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর