ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর-আইআরজিসি ১১৬ নট (২১৫ কিমি) গতির একটি ক্ষেপণাস্ত্র-বোট তৈরি করার দাবি করেছে। আইআরজিসি নৌবাহিনীর প্রধান এ কথা জানিয়েছেন। এসময় তিনি পারস্য উপসাগর রক্ষায় ব্যবহৃত ইরানের অত্যাধুনিক সামরিক সাফল্যের প্রশংসা করেছেন।
রিয়ার অ্যাডমিরাল আলিরেজা তাংসিরি বুধবার পারস্য উপসাগরের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই ঘোষণা দেন। এই দিনটি ১৬২২ সালে হরমুজ প্রণালী থেকে পর্তুগিজ নৌবাহিনীর বহিষ্কারের বার্ষিকী হিসেবে চিহ্নিত।
তাংসিরি বলেন, আমরা একটি ক্ষেপণাস্ত্র বোট তৈরি করেছি। যার গতি ১১৬ নট বা ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার। এটি সমস্ত প্রযুক্তিগত এবং বিশেষায়িত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
আইআরজিসি নৌবাহিনী নিজস্ব জাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ডুবোজাহাজ তৈরি করে। তাংসিরি বলেন, আমরা পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত কাজ করি।
বাহিনীর সক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে কমান্ডার বলেন, আমাদের মনে আছে যে [১৯৭৯] বিপ্লবের আগে আমরা একটি ছোট মাছ ধরার নৌকাও তৈরি করতে পারতাম না। একটি আমেরিকান কোম্পানি আমাদের জন্য এগুলো তৈরি করেছিল। কিন্তু এখন আমরা সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির শহীদ (শহীদ) সোলাইমানি জাহাজ তৈরি করেছি। যা ৫০০০ নটিক্যাল মাইল বিরতিহীনভাবে সমুদ্রে চলাচল করতে পারে।
পারস্য উপসাগর প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত। উত্তরে আরভান্দ নদী বেষ্টিত এই উপসাগর। ইরান ও ইরাকের সীমান্ত গঠন করে এবং দক্ষিণে হরমুজ প্রণালী। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান সাগর এবং ভারত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করে।
কৌশলগত অভ্যন্তরীণ সমুদ্র হল পশ্চিম এশিয়াকে আফ্রিকা, ভারত এবং চীনের সাথে সংযুক্ত করার একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ। ঐতিহাসিকরা এবং প্রাচীন গ্রন্থগুলো এটিকে পারস্য উপসাগর হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু আচেমেনিড সাম্রাজ্য বর্তমানে আধুনিক ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আইআরজিসি নৌবাহিনীর কমান্ডার তার বক্তব্যে বলেন, পারস্য উপসাগরের একটি অন্তর্নিহিত গুরুত্ব রয়েছে। গভীরতম উপকূল এবং সবচেয়ে উপযুক্ত আন্তর্জাতিক জলপথগুলি ইরানের পাশে অবস্থিত।
তাংসিরি বলেন, পারস্য উপসাগরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থান রয়েছে। এই অঞ্চলে তেল ও গ্যাস রপ্তানি খুব বেশি, যেমন এই অঞ্চলের ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ৬২ শতাংশ তেল পারস্য উপসাগর থেকে রপ্তানি করা হয়। এতেই বোঝা যায় পারস্য উপসাগরের গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক অবস্থান কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাংসিরি আরও বলেন, নিরাপত্তার দিক থেকে পারস্য উপসাগরের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বারবার ইরানের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা পাঠিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, আমরা শান্তি, বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের সন্ধান করছি।
হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন জাহাজ চলাচলের কথা উল্লেখ করে কমান্ডার বলেন, “আজ, আমরা হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে পেরে এবং এই অঞ্চলে ৮০টিরও বেশি জাহাজের দৈনিক চলাচলের বিষয়টি গর্বিত, যা এই গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত অঞ্চলের তাৎপর্য নির্দেশ করে।”
তাংসিরি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, বহির-আঞ্চলিক শক্তির উপস্থিতি তাদের ভয়াবহ চক্রান্তের কারণে বিঘ্নিত হবে। কৌশলগত হরমুজ প্রণালীতে নিরাপত্তাহীনতার আন্তর্জাতিক মাত্রা এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব রয়েছে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত। পারস্য উপসাগরে আমাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল শান্তি, নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ব এবং বন্ধুত্ব। আমরা বিশ্বাস করি যে পারস্য উপসাগরে বিদেশিদের উপস্থিতি নিরাপত্তা ব্যাহত করবে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল