ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে ১৫ হাজার সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জন নিহত এবং ৪ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে মোট হতাহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে।
গতকাল বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএসের একটি গোপন ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান দেশটির দুই আইনপ্রণেতা—লি সিয়ং-কেউন ও কিম বিয়ং-কি। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির সদস্য।
লি সিয়ং-কেউন বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের দক্ষতা সীমিত ছিল। কিন্তু ছয় মাস যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় তাঁরা ড্রোনসহ নতুন অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠেছেন।’
দুই দিন আগে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে সেনা পাঠানোর কথা স্বীকার করে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের বরাত দিয়ে বলা হয়, তিনি সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনের ‘নব্য-নাৎসি দখলদারদের ধ্বংস করে কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করার’ নির্দেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ ‘উত্তর কোরীয় সেনাদের বীরত্বের’ প্রশংসা করার পরই পিয়ংইয়ং এ স্বীকারোক্তি দেয়।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার গত জানুয়ারির গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত উত্তর কোরীয় সেনা নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। মাত্র কয়েক মাসেই তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, রাশিয়ার সমর্থনের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া পেয়েছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, ড্রোন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং এসএ-২২ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।
এই সহযোগিতা দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভাষ্য, উত্তর কোরিয়া গত বছর কুরস্ক অঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছে। কেসিএনএ বলছে, এই মোতায়েন পিয়ংইয়ং ও মস্কোর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ।
‘রক্তে প্রমাণিত বন্ধুত্ব’ উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া বলেছে, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। তবে কেসিএনএ জানায়নি, কুরস্ক মিশন শেষে এসব সেনার ভাগ্যে কী ঘটবে।
পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সেনা পাঠিয়ে পিয়ংইয়ং শুধু রাশিয়ার প্রতি সমর্থনই দেখাচ্ছে না, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি শক্ত বার্তাও দিচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা